সবকিছু আইনে থাকবে না

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মধ্যস্থতা করা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়, এটা ঠিক। কিন্তু ইসিকে রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থায় থাকতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ইসির ওপর দলগুলোর আস্থার অভাব থাকে। এই কমিশনের ওপরও অনেক দলের আস্থার অভাব আছে। ইসির নিয়োগ নিয়েও অনেক কথা হয়েছে। এই দলগুলোকে আস্থায় আনতে হলে, এ সময় ইসির এই ধরনের কথা না বলাই ভালো।

নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে হলে যে দলগুলো মনে করে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, তাদের সঙ্গে ইসি আলাদা কথা বলতে পারে। আমাদের মতো দেশে ইসিকে শুধু ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট থাকলে হবে না। মানুষের ভরসা থাকতে হবে যে ইসি ভালো কিছু করবে। যেহেতু রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন দেওয়ার মাধ্যমে ইসির সঙ্গে দলগুলোর একধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়, তাই ইসির একধরনের অলিখিত দায়িত্ব, কোনো দল সংক্ষুব্ধ হলে তার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলা, সরকারের সঙ্গেও ইসি কথা বলতে পারে। ইসি সংক্ষুব্ধ দলকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিতে পারে। এটা নির্ভর করবে মানসিকতার ওপর। সবকিছু আইনে থাকবে না, সংবিধান বা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) থাকবে না। যদি জনগণ এবং দলগুলো ইসির ওপর আস্থা রাখতে না পারে, তাহলে ভালো নির্বাচন করলেও জনগণ তা গ্রহণ করতে চাইবে না।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়ে কোনো বক্তব্য প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা না দিলেই ভালো করতেন। কারণ বিষয়টি একটি ‘ডিবেটেবল’ ব্যাপার। এ নিয়ে তিনি কথা না বললেই ভালো হতো। বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া বরং ভালো ছিল। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দল, জনগণ, গণমাধ্যম—সবখানে পক্ষ-বিপক্ষ আছে। তাই এ প্রসঙ্গে অন্যভাবে উত্তর দিলেও পারতেন।

নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করার প্রয়োজন হবে কি না, সেটা অবশ্যই ইসির সিদ্ধান্ত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কতটুকু বাহিনী লাগবে, কম্পোজিশন কী হবে—এসব ঠিক করা ইসির কাজ। সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে দুটি অপশন—একটি হলো সরাসরি ইসির অধীনে সেনা মোতায়েন, আরেকটি হলো পরোক্ষভাবে। ইসিকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে কোনটাতে তারা কমফোর্ট ফিল করে, এ জন্য প্রয়োজন হলে আইন সংশোধন করতে হবে। ইসি যদি মনে করে, সেনা মোতায়েন করার প্রয়োজন আছে তাহলে করবে, না হলে করবে না। সাধারণত ১৯৭৩ সালের পর থেকে কয়েকটি কারণে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে। প্রথমত, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যতসংখ্যক সদস্য প্রয়োজন হয়, বেসামরিক বাহিনী দিয়ে তা পূরণ করা অনেক সময় সম্ভব হয় না। দ্বিতীয়ত, জনগণের মধ্যে সরকারি বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ নিয়ে একধরনের ধারণা আছে যে তারা নিরপেক্ষ নয়। তারা নানা কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত। বিপরীতে সেনাবাহিনীকে মানুষ নিরপেক্ষ মনে করে। সেনাবাহিনীর মতো একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী মাঠে থাকলে মানুষ ভরসা পায়। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়। নির্বিঘ্নে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে মহিলা ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করে। এখন ভয়াবহ বন্যা হচ্ছে, সেখানেও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে জনগণের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্পর্ক অনেক গভীর।

এম সাখাওয়াত হোসেন: সাবেক নির্বাচন কমিশনার