বন্যাদুর্গতরা দিশেহারা

শুক্রবার সকাল নয়টা! দিনাজপুর শহরের রাজবাটি এতিমখানা। রিকশাভ্যানে মালামাল তুলছে বন্যায় ঘরহারা কয়েকটি পরিবার। তাদের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন অশীতিপর জোহরা বেগম।

বাড়ির ফিরে যাচ্ছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে জোহরা জানান, এতিমখানার নির্মাণকাজ করা হবে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের লোকজন তাঁদের বিকেলের মধ্যেই চলে যেতে বলেছেন। হঠাৎ এমন নির্দেশে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা। বন্যা শুরুর পর পাঁচ দিন ধরে এখানেই ছিলেন তাঁরা। এখন কোথায় যাবেন বুঝতে পারছেন না।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে শহরের আরেকটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল, হঠাৎপাড়ার লাইলী বেগম (৫০) বাড়িতে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করে মালপত্র গুছাচ্ছেন। বন্যার পানি বাড়ি থেকে নেমেছে কি না জানতে চাইলে হাউমাউ করে বলে ওঠেন, ‘বা মাথা গোঁজার মিচ্চিয়ানা জমি। তা–ও বানোত ঘরটা ভাঙ্গি গেছে। আজ শুনাবা পাওছি বাড়ির পাশের লোক হামার জমিত ঘেরা দেওছে। কেঙ্গেরে থাকি এখন কও?’

শহরের বাঁধ–সংলগ্ন খামার ঝাড়বাড়ি মহল্লার রুমা খাতুন (২৫)। স্বামী নেই। এক বছর বয়সী বাচ্চাটাকে নিয়ে তাঁর সংসার। অন্যের বাড়িতে কাজ করে চলেন। বন্যায় মাটির ঘরটি ভেঙে গেছে। এখন বাড়ির মালামাল নিরাপদে রাখবেন কীভাবে, কাজ করতে যাবেন কীভাবে—সে চিন্তায় দিশেহারা।

সদর উপজেলা পরিষদ চত্বরে নবনির্মিত মিলনায়তনে আশ্রয় নিয়েছেন মির্জাপুর গ্রামের সিরাজ মিয়া (৬০)। স্ত্রী তাঁর পক্ষাঘাতগ্রস্ত। দিনমজুরের কাজ করতেন। বন্যায় বাড়ি ধসে গেছে। অধিকাংশ মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। শহরে কোনো কাজও নাই। এখন কোথায় কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না।

জোহরা বেগম, রুমা খাতুন, সিরাজ মিয়ার মতো বন্যায় সর্বস্বান্ত হওয়া প্রায় ৬০ হাজার মানুষ কী করবেন, কোথায় থাকবেন, সে চিন্তায় দিশেহারা।

দিনাজপুর ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, এবারের বন্যায় দিনাজপুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার লোক। এর মধ্যে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ নিম্ন আয়ের। এর মধ্যে বেশির ভাগ কৃষিশ্রমিক।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় মোট ১ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে যায়। কৃষি কার্যালয়ের লোকজন বলছেন, তলিয়ে যাওয়া জমিগুলো চাষাবাদের উপযোগী হতে আরও ১৫ দিন লাগবে।

দিনাজপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, বর্তমান সরকার অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের পুনর্বাসন করবে। সেই লক্ষ্যে প্রশাসনও কাজ করছে।