মানুষ মানুষের জন্য

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যাদুর্গত মানুষের সাহায্যে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় তহবিল সংগ্রহের কাজ করছে বিভিন্ন সংগঠন। ছবিটি সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে তোলা। ছবি: সাইফুল ইসলাম
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বন্যাদুর্গত মানুষের সাহায্যে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় তহবিল সংগ্রহের কাজ করছে বিভিন্ন সংগঠন। ছবিটি সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে তোলা। ছবি: সাইফুল ইসলাম

আজ শাহবাগ তো কাল মিরপুর। নাইম বিল্লাহ হাতে একটি বক্স নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছুটছেন। সামনে যাকে পাচ্ছেন সাহায্য চাচ্ছেন। তবে নিজের জন্য নয়। বাক্সের গায়ে লেখা—‘বন্যার্তদের জন্য একটু সাহায্য করুন’। নাইমের মতো রাজধানীর পথে পথে অনেকেই উত্তরাঞ্চলে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সাহায্যের জন্য টাকা তুলছেন। 

নাইমদের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক সংগঠন নেই। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া নাইম কয়েক বন্ধু মিলে বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য টাকা সংগ্রহ শুরু করেছেন। আজ দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। গতকাল থেকে তাঁরা পথে নেমেছেন। বললেন, মানুষের সাড়া মিলেছে ভালোই। তাঁদের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমরা টার্গেট ধরেছি পাঁচ লাখ টাকার। এর কাছাকাছি পরিমাণ টাকা হয়ে গেলেই আমরা ২৫ তারিখের দিকে রওনা করব কুড়িগ্রামের দিকে।’ চাল, ডাল, তেলসহ শুকনা খাবার পৌঁছে দেবেন। তবে সাহায্য চাওয়ার সময় কেউ বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন করে কি না জিজ্ঞেস করলে নাইম বলেন, ‘সেই প্রশ্ন তো শুনতেই হয়। মানুষের প্রতি বিশ্বাসটাই বড়। আমরা জানি, আমরা সাহায্য করতেই যাচ্ছি।’
টিএসসির সামনেই চেয়ার-টেবিল পেতে দুজন বসে আছেন। সামনে বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য বাক্স। গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের দুই শিক্ষার্থী চাঁদনী খানম ও নওশীন শারমিন সাহায্যের অপেক্ষায় স্বরকল্পন নামের একটি আবৃত্তি সংগঠনের পক্ষ থেকে বসে আছেন। গুলিস্তান, শাহবাগসহ কয়েকটি স্থানে তাঁদের সদস্যরা সাহায্যের জন্য টাকা তুলছেন। তাঁরা লালমনিরহাট যাবেন ২৫ আগস্ট। এভাবে সাহায্য তোলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমাদের সবারই দায়বদ্ধতা আছে। সেখান থেকেই সবার এগিয়ে আসা উচিত।’
সায়েন্স ল্যাবরেটরির পুলিশ বক্স মোড়ে রিকশা জটের মধ্যে একজন হাতে বক্স নিয়ে এর-ওর কাছে সাহায্য চাচ্ছেন। দূর থেকে এক রিকশা আরোহী ডেকে ওই ব্যক্তির বাক্সে টাকা দিলেন। তাঁকে ফেরাচ্ছেন খুব কম লোকই। শাহাদাৎ হোসেন নামের এক ব্যক্তিও টাকা দিলেন। প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজেরা তো সরাসরি কিছু করতে পারছি না। এঁরা যে সাহায্য করছে অন্তত সেটাকে তো উৎসাহ দিতে পারি।’ এই টাকা আদৌ সেখানে পৌঁছাবে কি না, সে সন্দেহ পোষণ করলেও বলেন, ‘এখনো ভালো মানুষের সংখ্যাই বেশি।’
এই মোড়ে টাকা সংগ্রহ করছিলেন পথিকৃৎ নামের একটি সংগঠনের সদস্য। সংগঠনটির সভাপতি ফোরকান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, গত তিন দিন থেকে তাঁরা সাহায্যের জন্য পথে নেমেছেন। যাবেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে। প্রায় চার শ পরিবারকে সহায়তা করার পরিকল্পনা করছেন। সাহায্য হিসেবে দেবেন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। যোগাযোগ রাখছেন স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে। সাহায্যের জন্য মাঠে নেমে মানুষের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বলেন, ‘বাহবা পাচ্ছি। আবার সন্দেহের মুখেও পড়েছি। তবে আমরা এই টাকা নিয়ে কী করব তা যে কেউ স্বচক্ষে দেখতে পারেন। আগামী বৃহস্পতিবার আমরা যাব। যে কেউ চাইলে জয়েন করতে পারেন।’
রাস্তায় নামলেই এখন বিভিন্ন ট্রাফিক সিগন্যাল বা শপিং মলে বানভাসি মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর আকুতি নিয়ে এ রকম বাক্সসহ অনেককেই দেখা যায়। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলেও বেশ বড় দুটি কাচের বাক্স রাখা। সাধ্যমতো অনেকেই সেখানে টাকা দিচ্ছেন। এভাবে সাহায্য তোলা নিয়ে কারও কারও মনে সন্দেহ থাকলেও বিশ্বাসের ওপর ভর করে অনেকেই বন্যার্তদের জন্য পকেট থেকে যা সম্ভব বের করে দিচ্ছেন।