সরকারের গুরুত্বের শীর্ষে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জন-আস্থা ফিরে পাওয়া, ইশতেহার বাস্তবায়ন ও উন্নত যোগাযোগ-ব্যবস্থার সুবিধা দ্রুত পৌঁছানোকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সরকার দৃশ্যমান কোনো কিছু দ্রুত করতে চায়, যাতে আগাম নির্বাচন হলেও তার সুফল আওয়ামী লীগ পায়। সরকারের একাধিক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।

সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আওয়ামী লীগের নেতাদের মতে, অন্তত ছয় মাসের মধ্যে এমন কোনো কাজ করা যাতে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারে আওয়ামী লীগই মানুষের ভরসার স্থল, আস্থার জায়গা। এ জন্যই আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদের মতো অভিজ্ঞ এবং শাহরিয়ার আলম ও জুনয়াদে আহমেদের মতো তরুণদের দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়েছে। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার প্রকল্প মনিটরিং কমিটির বৈঠকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ছয়টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো হলো—পদ্মা সেতু, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, ঢাকা গণপরিবহন উন্নয়ন প্রকল্প (মেট্রো রেল), কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর স্থাপন এবং তরল প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বিষয়গুলো বাস্তবায়নে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী ও মসিউর রহমান এবং যেসব মন্ত্রণালয়ের অধীনে কাজগুলো হবে সেসব মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

প্রকল্প মনিটরিং কমিটির একজন সদস্য ‘প্রথম আলো’কে বলেন, এ ছয়টি প্রকল্প হলো দৃশ্যমান। এরপর আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যে বিষয়গুলো রয়েছে, সেগুলো পর্যায়ক্রমে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে সরকার। তিনি বলেন, এ প্রকল্পগুলো ছাড়াও দেশে শান্তি-স্থিতিশীলতা আনা, নির্বাচন-পরবর্তী কূটনৈতিক টানাপোড়েন দূর, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক জোরদারসহ নানা বিষয়কে সরকার অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তাঁর মতে, এসব কাজ শুরু করতে পারলে পাঁচ বছরের আগে নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগ মোটামুটি সম্মানজনক ফল পাবে। 

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ‘জিরো টলারেন্স’-এর ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য যতটা কঠোর হওয়া দরকার, ততটা কঠোর হবেন বলে প্রকাশ্য জনসভায় ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। নাশকতা প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা পালন ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে সরকার ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক তৎপরতা দমনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারবে এবং হারানো জনপ্রিয়তা ফিরে পাবে। ইতিমধ্যে সেটা প্রমাণ হয়েছে। সাতক্ষীরা, যশোর, গাইবান্ধাসহ যেসব এলাকায় সংখ্যালঘু ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন, সেসব এলাকায় প্রধানমন্ত্রী সফর করছেন। এর মাধ্যমে আক্রান্তদের মনে সাহস ফিরিয়ে আনছেন শেখ হাসিনা।

সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়ে জানতে চাইলে যোগাযোগমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে চীন কারিগরি সহায়তা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। মানুষের বহুল আকাঙ্ক্ষিত এ সেতুর মূল অংশের কাজ অচিরেই শুরু হবে। আর আমাদের ঘোষিত ইশতেহার অনুযায়ীই সব পরিকল্পনা এগিয়ে যাবে।’

বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সরকারের প্রথম লক্ষ্য অবশ্যই ঘোষিত ইশতেহার বাস্তবায়ন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে অগ্রাধিকার, টিসিবির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে প্রতি মাসে একবার বৈঠক করব।’

খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘ইশতেহারকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা কাজ করে যাব।’ শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রমিক-অসন্তোষ রোধ করার জন্য যা যা করার দরকার, সেটা করব।’

সরকারের দায়িত্বশীল একজন মন্ত্রী ‘প্রথম আলো’কে বলেন, কাম্য সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিজের হাতে রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপাতত কয়েক মাস তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী এ মন্ত্রণালয় চলবে। তাঁর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সাতক্ষীরা, গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন এলাকায় যৌথ বাহিনী কাজ করছে।

আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়টি আমলে নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শাহরিয়ার আলমকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরও গুরুত্ব দিতে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর ছেড়ে দেওয়া রংপুর-৬ আসন থেকে তাঁকে উপনির্বাচনে জয়ী করে নিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। 

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ‘প্রথম আলো’কে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ইশতেহারে ঘোষিত আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়নি।’