অনলাইনে বসে গেছে পশুর হাট

‘...এটা দেখি ওটা দেখি, ওয়েবসাইটের ঢেঁকি ধান ভানে রোজ/ সার্ভার চুপচাপ নিচ্ছে যুগের মাপ, ডটকম এ খোঁজ/ সবই দেখি পাওয়া যায়, কম্পিউটারটায় যদি টাকা থাকে...।’

নতুন সহস্রাব্দের শুরুতে ২০০০ সালে শিল্পী কবির সুমন তাঁর ছুটি ডটকম নামের গানটিতে তুলে এনেছিলেন অনলাইন বিকিকিনির বাস্তবতা। এরপর সময় আরও গড়িয়েছে। প্রযুক্তির বিকাশের সঙ্গে অনলাইনে মানুষের কেনাকাটার পরিসর বিস্তৃত হয়েছে। এই মাধ্যমে পোশাক-আশাক থেকে নিত্যব্যবহার্য জিনিস কিংবা বাড়ি-গাড়ি কেনার বিষয় এখন পুরোনো। হালে কোরবানির গরুও মিলছে এখানে। এমনকি ওয়েবসাইটে গরু পছন্দ করে অর্ডার দিলে কুরবানি দিয়ে বাড়িতে মাংস পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা রেখেছে একটি প্রতিষ্ঠান।

এই মুহূর্তে স্থায়ী-অস্থায়ী কিংবা অঞ্চলভিত্তিক হাটগুলো জমে হয়ে ওঠার আগেই কোরবানির পশু বিক্রির প্রচার-প্রচারণায় সরব হয়ে উঠেছে বিভিন্ন অনলাইন ক্লাসিফাইড সাইট ও ই-কমার্স গ্রুপ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজ খুলে চলছে বিক্রি ও প্রচারের কাজ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে বাস্তবের হাটের তুলনায় অনলাইনে বিক্রির পরিমাণ খুব বেশি না হলেও প্রতিবছর ক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে। সেই সঙ্গে এসব সাইটে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কৌতূহলী ভিজিটরের সংখ্যা।

কোরবানির পশু কেনার এই প্রক্রিয়ায় গরু-ছাগল কিনে আনা কিংবা তা বাড়িতে লালন-পালনের ঝামেলা নেই। অনলাইনে বুকিং দিয়ে কিছু অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করলে নির্দিষ্ট সময়ে এটি বাড়িতে পৌঁছে দেবে বিক্রেতা বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে কোনো কোম্পানি সরাসরি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত। আবার কোনো প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে শুধু পশু কেনাবেচার বিজ্ঞাপন প্রকাশ পাচ্ছে।

এর মধ্য আমার দেশ ই-শপ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের খামারি ও গৃহস্থদের গরু দিয়ে অনলাইন হাট বসিয়েছে। সাইটে বিভিন্ন আকারের গরুর ছবিসহ দাম উল্লেখ করা আছে। এই ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.amardesheshop.com

সাইটটি ঘুরে দেখা গেছে, এবার সেখানে কিশোরগঞ্জের গরু বেশি। দাম ৬৩ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত। এ বিষয়ে কথা হয় আমার দেশ আমার গ্রাম প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘সাইটের গরুগুলোর বেশির ভাগ গ্রাম পর্যায়ের গৃহস্থ কৃষকদের। আমরা অনলাইনে তাঁদের পালিত পশু বিক্রির ব্যবস্থা করে দিই মাত্র। কৃষকরাই তাঁদের গরুর দাম নির্ধারণ করেন। অনলাইনে ছবি দেখে কেউ যদি পছন্দের গরু বাছাই করেন, তাহলে আমরা সেই ক্রেতাকে সরাসরি কৃষকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিই। সেখানে দর-কষাকষির সুযোগও থাকে। এই প্রক্রিয়ায় কোনো মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় কৃষকেরা একটু বেশি লাভবান হন।’

আতাউর রহমান জানান, অন্য বছরগুলোতে গরুর বেশির ভাগের চালান আসত উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা থেকে। এ বছর সেখানে বন্যা হওয়ায় এখন পর্যন্ত কিছুটা মন্দাভাব আছে। তবে কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী ও টাঙ্গাইলের কৃষকদের গরু তাদের ওয়েবসাইটের পাতায় উঠছে। এই কেনাবেচার প্রক্রিয়ায় গরু ক্রেতার বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত সেবামাশুল নেওয়া হয়, যা শুধু রাজধানী শহরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ২৮ আগস্ট পর্যন্ত আমার দেশ ই-শপে পশু বিক্রি হবে। আর ক্রয় করা পশু ৩০ আগস্টের মধ্যে ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হবে। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত তারা ২২টি গরু বিক্রি করেছে।

আমার দেশ আমার গ্রাম কর্তৃপক্ষ বলছে, নগরের বাসিন্দাদের অনেকে দুস্থ মানুষের কাছে কোরবানির মাংস পৌঁছে দেওয়ার জন্য গ্রামে কোরবানি দিতে যান। এ ক্ষেত্রে গত বছর পর্যন্তও নির্দিষ্ট অঙ্কের সেবামাশুলের বিনিময়ে ক্রেতার হয়ে তাঁর পছন্দের এলাকায় পশু কোরবানি করা থেকে মাংস বিলি বণ্টনের ব্যবস্থা ছিল তাঁদের। কিন্তু এবারের বন্যার কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে অনলাইনের পরিসরে এখন পরিচিত নাম বেঙ্গল মিট। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো প্রতিষ্ঠানটি তাদের অনলাইন হাট চালু করেছে কোরবানি ও গরু সরবরাহের সেবা নিয়ে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বিপণন কর্মকর্তা এইচ ইউ এম মেহেদী সাজ্জাদ প্রথম আলোকে বলেন, এবারের হাটের প্রধান আকর্ষণ বেঙ্গল মিটের নিজস্ব খামারে পেশাদার পশু চিকিৎসক ও পালকের পর্যবেক্ষণে অন্তত তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত প্রাকৃতিক উপায়ে পালিত কোরবানির পশু।

ক্রেতারা www.bengalmeat.com/qurbani এই ঠিকানায় কোরবানির পশুর অর্ডার দিতে পারবেন। নির্দিষ্ট ডেলিভারি চার্জের বিনিময়ে ক্রেতাদের বাসায় পৌঁছে দেওয়া হবে পছন্দের পশু। পশুর সহজলভ্যতার ওপর ভিত্তি করে অনলাইন হাটটি চলবে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত।

এ ছাড়া পূর্ণ সেবার আওতায় বেঙ্গল মিট ক্রেতাদের পক্ষ থেকে পশু কোরবানি করে মানদণ্ড অনুসারে মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ ও তা বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার বিশেষ সেবাও দিচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের গরু সরবরাহের সেবা শুধু ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম শহরে পাওয়া যাবে। আর কোরবানির সেবা দেওয়া হবে শুধু ঢাকা শহরে। ঈদের দ্বিতীয় দিনে মাংস পৌঁছে দেওয়া হবে বাড়িতে।

বেঙ্গল মিট এ পর্যন্ত ৪০০ গরু বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি গরু বিক্রি হয়েছে কোরবানি সেবাসহ।  

ক্লিকবিডি লিমিটেড নামের একটি অনলাইনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানও তাদের ওয়েবসাইটে কোরবানির পশু বিক্রির বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। মূলত বিক্রেতা নিজের খরচে এখানে বিজ্ঞাপন দেন। এই ওয়েবসাইটের ঠিকানা: www.clickbd.com

দেশের অন্যতম অনলাইন বেচাকেনার পোর্টাল বিক্রয় ডটকমে  www.bikroy.com বেচাকেনা এখন জমজমাট। এখানে মিলছে ফ্রিজিয়ান জাতের গরু থেকে দেশি ষাঁড় ও বকনা গরু। হাট জমাতে দেশি ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড মিনিস্টার হাইটেক পার্ক লিমিটেডের সঙ্গে তারা যৌথভাবে ঘোষণা করেছে বিরাটহাট (#BiratHaat) শীর্ষক অফার। এর বাইরেও আছে ঢাকার আশপাশে গড়ে ওঠা বিভিন্ন খামারের নিজস্ব ফেসবুক পেজ।