মাদকে বাধা দেওয়ায় রংপুর ও আখাউড়ায় হামলা-আগুন

মাদক সেবন-বিক্রিতে বাধা দেওয়ায় গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় মুক্তিযোদ্ধার ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাদক সেবন ও অসামাজিক কাজে বাধা দেওয়ায় একই দিন রংপুর নগরের তাজহাট এলাকায় এক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
আখাউড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা নৌ-কমান্ডো ফজলুল হক ভূইয়ার জমিজমা নেই। তিনি পৌর শহরের বড় বাজারের একটি ধান ভাঙানোর বয়লারের পাশে সরকারি একটি পুকুরপাড়ে কোনো রকমে ঝুপড়িঘর তুলে থাকেন। পাশের ঘরে দিনে-রাতে মাদকসেবীরা ভিড় করেন। ঘরে বসেই মাদক সেবন করেন তারা। এসব ঘটনার প্রতিবাদ করেন মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক ভূইয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর ঘরে আগুন দেন মাদক ব্যবসায়ীরা। এ সময় তিনি ঘরে ছিলেন না। বাড়িতে থাকা তাঁর মেয়ে ও স্ত্রী ছিলেন উঠানে। ঘরে হঠাৎ আগুন দেখে চিৎকার করলে বাজারের লোকজন গিয়ে আগুন নেভান।
একই কারণে ২০১১ সাল থেকে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছেন মাদক ব্যবসায়ীরা। এই নিয়ে আখাউড়া পৌরসভা, সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও থানা পুলিশে অভিযোগ দেন তিনি।
সরজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা দেছে, আগুনে ঘরের দরজার বেড়ার একাংশ ও বেড়া লাগোয়া একটি কাঠের আলমারি পুড়ে গেছে। বইসহ অনেক কাগজ পুড়ে গেছে। ফজলুল হক জানান, কিছু নগদ টাকাও পুড়ে গেছে।
পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বড় বাজারের বাসিন্দা সৈয়দ মশিউর রহমান বলেন, ফজলুল হক ভূইয়া একজন সৎ মানুষ। তিনি নিতান্ত গরিবও। তার পরও দীর্ঘদিন থেকে ওই মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে তিনি অনেকটা একাই লড়াই করে যাচ্ছেন।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-তদন্ত) বলেন, ঘটনা জানার পর সেখানে একজন কর্মকর্তা গিয়ে খোঁজ নিয়ে এসেছেন। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রংপুর নগরের তাজহাট এলাকার সৈকত লিটার পয়েন্ট নামে মাছের খাদ্য সরবরাহকারী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে ১৫-২০ জন ধারালো অস্ত্রধারী হামলা চালিয়ে ভাঙচুর শেষে আগুন লাগিয়ে দিয়ে পালিয়ে যান।
সরেজমিনে জানা যায়, বেশ কিছুদিন থেকে তাজহাট এলাকার রেজওয়ান, রাজ্জাক, শাহারুল, রুবেল, তারা মিয়া, সুজন, সুমন, শহিদুল, আপেল নামের কয়েকজন এলাকার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটির পাশের একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে মাদক ব্যবসাসহ অসামাজিক কাজ করে আসছেন। ব্যবসায়ী সোহেল রানা গত সোমবার এসবের প্রতিবাদ করেন। সেদিনই তাঁকে ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিয়ে মারধর করেন তাঁরা। এ ব্যাপারে সোহেল রানার বাবা মোহাম্মদ আলী ওই দিন রাতে কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশের কাছে অভিযোগ করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ব্যক্তিরা গতকাল বিকেলে বন্ধ থাকা দোকান ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে চার লক্ষাধিক টাকার মালপত্র মাছের খাদ্য, সারসহ আসবাবপত্র পুড়ে যায়।
সোহেল রানা বলেন, ‘সংঘবদ্ধ দলটি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক আবদুল মজিদের মদদে এই কাজ করছে। আমরা এখন ভয়ে পালিয়ে আছি।’ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মমিনুল মিয়া বলেন, আগুন লাগানোর পরে সন্ত্রাসীরা কাউকে নেভাতেও দেয়নি। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও আটকে দেয় তারা।
এ ব্যাপারে শ্রমিক নেতা আবদুল মজিদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন খলিফা বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছি। এখনো মামলা হয়নি। প্রক্রিয়া চলছে।’