জলাবদ্ধ মানুষের কষ্টের শেষ নেই

ডিএনডি বাঁধের অভ্যন্তরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার একটি বাড়ি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো
ডিএনডি বাঁধের অভ্যন্তরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকার একটি বাড়ি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। ছবিটি গতকাল তোলা l প্রথম আলো

সড়কজুড়ে কোথাও হাঁটু পর্যন্ত আবার কোথাও কোমরসমান পানি। সেই পানিতেই হাঁটাচলা করছেন স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, বৃদ্ধ সবাই। কয়েকজনকে গামবুট পরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল। তবে গামবুটেও কাজ হচ্ছে না। প্রায় প্রতিটি দোকানের ইট দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়েছে।

অনেকেই চলাচল করছেন নৌকায়। কেউ রিকশা চালালেও ভাড়া হাঁকেন কয়েক গুণ বেশি। গত রোববার সরেজমিনে ডিএনডি বাঁধের অভ্যন্তরের এলাকার নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মদনগঞ্জ কলেজপাড়া এলাকায় এসব দৃশ্য দেখা গেল।

ওই এলাকার সড়কের চেয়েও বেশি দুরবস্থা দেখা গেল স্থানীয় লোকজনের বাড়িঘরে। বেশির ভাগ বাড়ির জানালা সমান পানি। বাসিন্দাদের ঘরের আসবাব বেশ কিছু ইট দিয়ে উঁচু করে কোনোভাবে স্তূপ করে রাখা। শৌচাগার ডুবে যাওয়ায় বস্তার ওপর বসানো হয়েছে গোল চাকতি। বাচ্চারা বাড়ির আঙিনায় নোংরা পানিতে নেমেই খেলছে। রান্না করা হচ্ছে কোথাও ইট দিয়ে উঁচু করে, কোথাও খাটের ওপরে। 

কলেজপাড়ার বাসিন্দা কুলসুম বিবি বলেন, তাঁর বাড়ি পানিতে ডুবে পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। তাই তিনি আরেকজনের বাসায় বসবাস করছেন। সেখানেও পানি আছে, তবে কিছুটা কম।

হোসনে আরা নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, বাসায় কোমরপানি, তক্তা, বস্তা দিয়ে উঁচু করে খাট রেখেছেন। চুলা রাখার জায়গা নেই। টয়লেটও (শৌচাগার) ডুবে গেছে।

পানির কারণে বন্ধ হয়ে গেছে উম্মেতুল হাফিজিয়া মাদ্রাসা, সানরাইজ স্কুল, বর্ণমালা কিন্ডারগার্টেনসহ ওই এলাকার বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

পোশাক কারখানায় কর্মরত মোহাম্মদ রফিক এই প্রতিবেদককে দেখাচ্ছিলেন তাঁর পায়ের ফোসকা। তিনি বলেন, এই পানিতে চলাচলের কারণে তাঁর পায়ের নখ নষ্ট হয়ে গেছে। চর্মরোগ দেখা দিয়েছে শরীরে।

সিদ্ধিরগঞ্জের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, ‘পাঁচ বছরের বাচ্চাটা বাসার সামনে খেলতেও পারে না পানির কারণে। কখনো বাইরে যেতে চাইলে কাঁধে করে বাইরে বের হই।’ 

সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকাটি সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলী হোসেন বলেন, ‘পানি দ্রুত সেচার জন্য দেড় মাস আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করেছি। দুই ইঞ্চি পানি কমলেও বৃষ্টির কারণে পানি চার ইঞ্চি বাড়ে।’ তিনি বলেন, ‘উত্তর মধ্যপাড়ায় আমার নিজের বাসার টয়লেটও বন্ধ। বাসায় ইট দিয়ে বাঁধ দিয়েছি। তারপরও পানি ঢুকছে। ডিএনডি খালের পানি বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অতিরিক্ত পাম্প বসানোর ব্যবস্থা নেই।’

উত্তর মধ্যপাড়ার মুদি দোকানদার মনির হোসেন বলেন, পানির জন্য মানুষ দোকানে আসতে পারে না। কয়েক মাস ধরে ব্যবসার অবস্থা খারাপ। 

স্থানীয় বায়তুল মামুর জামে মসজিদ থেকে নামাজ শেষে বেরিয়ে আসার সময় মো. আল নোমান নামের একজন বলেন, বাসা থেকে অজু করে মসজিদে আসতে গেলে ড্রেনের পানিতে কাপড় নোংরা হয়ে যায়। আবার অজু করতে হয়।

জলাবদ্ধতা ও পানি সরানোর বিষয়ে স্থানীয় সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, ‘বন্যার কারণে শীতলক্ষ্যা ও বুড়িগঙ্গার নদী এবং আশপাশের খালগুলোতে এখন অতিরিক্ত পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ৬ আগস্ট পানিসম্পদমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে আমার এ বিষয়ে কথা হয়েছে। তাঁরা আমাকে কথা দিয়েছেন, আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে তাঁরা এবং প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব দল এলাকা পরিদর্শনে আসবে। ডিএনডি প্রকল্পের কাজ শুরুর বিষয়ে জনগণকে জানাবেন। আশা করছি, নদীর পানি কমেগেলে আগামী অক্টোবর থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে।’