সুলতান চাঁপার নানা গুণ

সুলতান চাঁপা ফুল, পিরোজপুর থেকে তোলা ছবি l লেখক
সুলতান চাঁপা ফুল, পিরোজপুর থেকে তোলা ছবি l লেখক

পাখি খুঁজতে গিয়েছিলাম পিরোজপুরে। খেয়ানৌকায় বলেশ্বর নদ পার হয়ে হেঁটে চলেছি। নদের তীর ঘেঁষে হোগলার বনসহ বুনো গাছগাছড়ার ঝোপঝাড়। অনেক জায়গায় মাটি কেটে উঁচু করে কলাগাছ রোয়া হয়েছে। ছোট ও মাঝারি ধরনের বহু নালা রয়েছে কলাবাগানের ভেতর। জোয়ারের পানি এলে সেগুলো ভরে যায়। ঝোপঝাড়ের চারদিকে গুইসাপের বেশ আনাগোনা। তবে দেশি পাখি কম দেখা গেল। শালিক, ঘুঘু, পানকৌড়ি, কানিবক, বুলবুলি, ফিঙে, দোয়েল, বাবুই ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য প্রজাতির পাখির দেখা পাওয়া গেল না। নদের পাড় ধরে উত্তর দিকে হাঁটার পথে দেখা গেল বেশ কয়েকটি মাঝারি গড়নের সুলতান চাঁপা বৃক্ষ। এটা কিন্তু চাঁপা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত নয়। এর আরেক নাম পুন্নাগ। গাছজুড়ে অফুরন্ত প্রস্ফুটন। মৌমাছি ও পোকামাকড় ফুলে ফুলে বিচরণ করছে। দক্ষিণবঙ্গের উপকূলীয় এলাকায়, বিশেষ করে বরগুনা, বরিশাল, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরেও এ গাছ দেখেছি। তবে অন্যান্য গাছের তুলনায় অনেক কম। একক কোনো বনÿবা ঝোপ চোখে পড়েনি। ছড়ানো-ছিটানো রয়েছে।

পুন্নাগ বা সুলতান চাঁপা সুশ্রী, চিরসবুজ ও লম্বাটে গড়নের বৃক্ষ। অপেক্ষাকৃত কম শাখা-প্রশাখা থাকে। ২০ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। পাতা উজ্জ্বল সবুজ ও পাতার আগা গোল। ফুল ফোটা শুরু হয় বর্ষার শুরুর দিকে এবং শরৎ পর্যন্ত গাছে ফুল ফোটে। পাতার কোলে ১০-১৫ সেমি লম্বা শাখায়িত মঞ্জরিতে ছোট ছোট সুগন্ধি সাদা ফুল। প্রতিটি পুষ্পমঞ্জরিতে ৪-১৫টি ফুল থাকে। ফুলে কয়েক গুচ্ছের হলুদ রঙের পুংকেশর থাকে। ফল শাঁসাল, একবীজী। পাকা ফল হলদে বাদামি। বীজ ও কলম দিয়ে চারা করা হয়। প্রাকৃতিক আবাসে মা গাছের আশপাশে চারা পাওয়া যায়। পুন্নাগের বৈজ্ঞানিক নাম Calophyllum inophyllum. ইংরেজি নাম Alexandrian laurel, Indian-laurel. আদি আবাস পূর্ব আফ্রিকা, ভারত ও বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূল। অস্ট্রেলিয়া অবধি ছড়িয়ে পড়েছে।

এ গাছ উষ্ণমণ্ডলীয় এলাকায় ব্যাপকভাবে রোপণ করা হচ্ছে শোভাবর্ধণকারী বৃক্ষ হিসেবে। কারণ, সুন্দর ফুল ও গাছের গড়ন আকর্ষণীয়। যদিও এ বৃক্ষের বীজে
র তেল, কাঠ ও বাকলের ব্যাপক উপকারী ব্যবহার রয়েছে। এর কাণ্ড শক্ত এবং বন্যায় গাছ ভেঙে পড়ে না। কাঠ মজবুত। প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার দ্বীপবাসী এ কাঠ দিয়ে নৌকা তৈরি করে। তারা ফল ও গাছের কষ বিষাক্ত এবং মশা ও পোকা দমনে ব্যবহার করে। বীজ থেকে প্রাপ্ত তেলে ভেষজগুণ রয়েছে।

আট থেকে দশ বছর বয়সে গাছে ফুল আসে। ফল পানিতে ভেসে ভেসে নানান দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। যে কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে এটির বিস্তার ঘটেছে। এ বৃক্ষ উপকূলে বাতাসের তীব্র বেগকে কমিয়ে দিতে সাহায্য করে। কাঠ ফার্নিচার তৈরিসহ নানান কাজে লাগে। পতঙ্গ দ্বারা ফুলের পরাগায়ন ঘটে।