শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক

ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী! ঈদ শেষে দক্ষিণাঞ্চল থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ঘাট হয়ে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। ছবিটি শুক্রবার দুপুরে ঘাট এলাকার ফেরি থেকে তোলা। ছবি: আলীমুজ্জামান
ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী! ঈদ শেষে দক্ষিণাঞ্চল থেকে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ঘাট হয়ে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। ছবিটি শুক্রবার দুপুরে ঘাট এলাকার ফেরি থেকে তোলা। ছবি: আলীমুজ্জামান

মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি নৌপথে আজ শুক্রবার বিকেল থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। পদ্মার নাব্যতা সংকট ও একই সঙ্গে পানির প্রচণ্ড স্রোতের কারণে আট দিন ধরে ফেরি চলাচল মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছিল। এত দিন ৫/৬টি ফেরি চলাচল করলেও আজ থেকে ১৩টি ফেরি পারাপারের কাজ শুরু করেছে। তবে নদীতে কিছু পথ একমুখী হওয়ার কারণে দুই ঘাটে থাকা ফেরিগুলোকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

আট দিন ধরে পারাপারের ক্ষেত্রে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সময় লেগেছে। প্রয়োজনের তুলনায় ফেরি কম হওয়ায়, দুই পাড়েই অপেক্ষমাণ ছিল কয়েক শ গাড়ি। তবে আজ (শুক্রবার) থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে যাত্রী, চালক ও ঘাট কর্তৃপক্ষ। আগামীকাল থেকে ১৭টি ফেরি চলাচল শুরু করবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

মাদারীপুরের টেকের হাটের ট্রাকচালক মো. রিপন হোসেন বলেন, ১৮ দিন পর আজ ট্রাক নিয়ে ফেরিতে ওঠার সুযোগ পেয়েছেন। রিপন জানান, শিমুলিয়া ঘাটে ৭ দিন আটকে ছিলেন তিনি।

বর্তমানে ২০টি ফেরির মধ্যে বিকল্প চ্যানেল দিয়ে চলছে ৭টি। মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটের বিআইডব্লিউটিসির সহকারী পরিচালক শাহ মো. খালিদ নেওয়াজ বলেন, ‘আমরা আজ দুপুর থেকে ফেরি চালানোর সবুজসংকেত পেয়েছি। প্রাথমিকভাবে শিমুলিয়া ঘাট থেকে ডাম্প ফেরি এবং কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে একটি রো রো ফেরি চালানো শুরু হয়েছে। এখন ১৩টি ফেরি চলছে।’ তিনি আরও বলেন, নদীর মূল অংশ থেকে লৌহজংয়ের টার্নিং পয়েন্ট পর্যন্ত একমুখী চলাচল হওয়ায় ফেরিগুলোকে সাবধানে চলতে হবে।

গত রোববার দিবাগত রাত তিনটার সময় রায়পুরা, লেনটিন ও যমুনা নামের তিনটি ফেরি লৌহজং চ্যানেলে আটকে যায়। এরপর থেকেই শুরু হয় অসহনীয় দুর্ভোগ। দক্ষিণাঞ্চলের কয়েক হাজার যাত্রী এবার ঈদে বাড়ি ফিরতে পারেনি। যারা গিয়েছিল, ফেরার পথেও তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

লঞ্চ ও স্পিডবোটের মালিকদের পোয়াবারো
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে এই নৌপথে চলাচল ব্যাহত হওয়ার সুবিধা নিচ্ছেন লঞ্চ ও স্পিডবোটের মালিকেরা। শুক্রবার দুপুরে দেখা গেছে, ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় যাত্রীরা ঝুঁকছেন লঞ্চ ও স্পিডবোটে। লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটে যাত্রীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এই সুযোগে লঞ্চ ও স্পিডবোট মালিকেরা অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন যাত্রীদের কাছ থেকে। যাত্রীরা প্রতিবাদ জানালেও তাতে কান দিচ্ছেন না কেউ।

শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে অভিজিৎ কর্মকার নামে স্পিডবোটের একজন যাত্রী অভিযোগ করে বলেন, ‘স্পিডবোট টিকিট কাউন্টারের সামনে বড় করে বিজ্ঞাপন সাঁটানো আছে। সেখানে ১২০ টাকা লেখা থাকলেও যাত্রীপ্রতি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। শুধু তা-ই নয়, ১৬ জন ধারণ ক্ষমতার স্পিডবোটে বহন করা হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ জন যাত্রী।’

যায় যাক প্রাণ—তবু ফেরিতে উঠতেই হবে। ছবিটি শুক্রবার দুপুরে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ঘাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আলীমুজ্জামান
যায় যাক প্রাণ—তবু ফেরিতে উঠতেই হবে। ছবিটি শুক্রবার দুপুরে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ী ঘাট এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আলীমুজ্জামান

লঞ্চ যাত্রী আবুল খায়ের বলেন, ‘দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে লঞ্চে গাদাগাদি করে উঠেছি। লঞ্চে ভেতরে, বাইরে ও ছাদে তিল পরিমাণ দাঁড়ানোর জায়গা নেই। ঘাটে পুলিশ প্রশাসনের কাউকেই দেখলাম না। তাদের সঠিক নজরদারি থাকলে এমন হয়তো হতো না।’

স্পিডবোট মালিক সমিতির নেতা ইমান খান বলেন, ‘কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে শিমুলিয়া ঘাট পর্যন্ত স্পিডবোটে যাত্রী থাকে কিন্তু শিমুলিয়া ঘাট থেকে খালি আসে অনেক স্পিডবোট। তাই জেলা প্রশাসন ঈদ উপলক্ষে ১৮০ টাকা ভাড়া নির্ধারিত করে দিয়েছে। আমরা সেটাই নিচ্ছি।’

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রীদের চাপ থাকায় আমরা মালিক সমিতির কাছে জিম্মি। তাদের কিছু বলা হলে তারা লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়। এ জন্য প্রশাসন অসহায়।’