পদ্মার ভাঙনে ৩ লঞ্চডুবি: স্রোতে বিঘ্নিত উদ্ধারকাজ

নিখোঁজ লিটন শেখের স্ত্রী ফাতেমা বেগম দুই সন্তান নিয়ে নদী তীরে অপেক্ষা করছে। ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ
নিখোঁজ লিটন শেখের স্ত্রী ফাতেমা বেগম দুই সন্তান নিয়ে নদী তীরে অপেক্ষা করছে। ছবি: সত্যজিৎ ঘোষ

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ওয়াপদা লঞ্চঘাটে পন্টুন বিচ্ছিন্ন হয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চ তিনটি উদ্ধারের জন্য অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। নিখোঁজ যাত্রীদের খুঁজে পাওয়ার জন্য একযোগে কাজ শুরু করেছে নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও নৌ-পুলিশ। একটি লঞ্চ শনাক্ত করা গেছে। তবে স্রোতের কারণে ডুবুরিরা ওই লঞ্চের সঙ্গে কোনো দড়ি বাঁধতে পারছেন না।

আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। তবে পদ্মা নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকার কারণে উদ্ধার তৎপরতা বিঘ্নিত হচ্ছে। বৈরী আবহাওয়া ও স্রোতের কারণে গতকাল সোমবার উদ্ধার অভিযান চালানো যায়নি।

এদিকে সুরেশ্বর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে সজল পাল (২৫) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে নৌ-পুলিশ। মরদেহটি সুরেশ্বর মাছঘাটে রাখা হয়েছে। মরদেহের পকেটে থাকা মুঠোফোনের নম্বর দেখে ওই যুবকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে নৌ-পুলিশ। তিনি খুলনার রূপসা থানার পিটাভোগ পালপাড়া এলাকার শ্রীকান্ত পালের ছেলে।

নৌ-পুলিশের সুরেশ্বর ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) জয়নাল আবেদিন প্রথম আলোকে বলেন, সকাল নয়টার দিকে নড়িয়ার সুরেশ্বর এলাকার পদ্মা নদীতে একটি লাশ ভাসতে দেখে পুলিশ ফাঁড়িতে খবর দেন স্থানীয় জেলেরা। লাশটি উদ্ধারের পর পকেটে থাকা মুঠোফোনের নম্বর দেখে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

সজল পালের ভগ্নিপতি খুলনার সোনাডাঙা মডেল থানার এসআই দীপক পাল বলেন, বাড়িতে কাউকে কিছু না বলে সজল ৮ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে বের হয়। পরের দিন মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। নড়িয়া থানার পুলিশের পাঠানো ছবি দেখে লাশের চেহারা বোঝা যাচ্ছে না। পোশাক ও সঙ্গে থাকা ফোনের সিম কার্ড দেখে ধারণা, ওই মরদেহ সজলের হবে।

নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দীন জানান, লাশটি ফুলে গেছে ও চেহারা বিকৃত হয়ে গেছে। এই ব্যক্তি লঞ্চ দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন, না অন্য কোনোভাবে নিহত হয়েছেন, তা অনুসন্ধান করা হচ্ছে।

গতকাল পদ্মা নদী ভাঙনের কারণে নড়িয়া উপজেলার ওয়াপদা লঞ্চঘাটের পন্টুন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পানির স্রোতে পন্টুনে নোঙর করা তিনটি লঞ্চ ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া মৌচাক লঞ্চটি ওই ঘাট থেকে ঢাকায়, নড়িয়া–২ ও মহানগরী লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জে চলাচল করত। লঞ্চে থাকা তিন যাত্রী ও ১৩ জন কর্মী এখনো নিখোঁজ আছেন। আজ সকালে উদ্ধার হওয়া সজল পালের নাম নিখোঁজের তালিকায় ছিল না।

বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক (উদ্ধার) ফজলুর রহমান বলেন, লঞ্চ তিনটি ও নিখোঁজ যাত্রীদের উদ্ধার করার জন্য উদ্ধারযান ‘প্রত্যয়’ গতকাল বিকেলে ভেদরগঞ্জ উপজেলার দুলারচর এলাকায় অবস্থান করে। তবে স্রোতের কারণে অভিযান চালাতে পারেনি। আজ সকালে নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএর ডুবুরিরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেছে। একটি লঞ্চ দুলারচর এলাকায় শনাক্ত করা গেছে। কিন্তু স্রোতের কারণে ডুবুরিরা ওই লঞ্চের সঙ্গে কোনো দড়ি বাঁধতে পারছে না।