দেশের স্বার্থে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান

আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। ছবি: প্রথম আলো
আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। ছবি: প্রথম আলো

রাজনৈতিক দলগুলোয় এখন তরুণদের অংশগ্রহণ বাড়ছে, যা আশার আলো দেখাচ্ছে। দেশের সার্বিক উন্নয়নে তরুণ নেতৃত্বকে আরও সামনে আনতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহনশীলতার চর্চা বাড়াতে হবে। গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে হলে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে হলে মতপার্থক্য থাকলেও দেশের স্বার্থে সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত ‘তরুণ নেতৃত্বের উন্নতি এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির নেতারা এসব কথা বলেন। এর আগে উভয় দলের নেতা-কর্মীদের অংশগ্রহণে তৈরি একটি সুপারিশমালা সবার সামনে উপস্থাপন করা হয়।

রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের সুপারিশমালার মধ্যে রয়েছে দলের মূল কমিটিতে তরুণ নেতৃত্ব নিশ্চিত করা, নির্বাচনে যুব ও তরুণ নেতৃত্ব, শক্তিশালী যুব ও ছাত্রসংগঠন, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আয়োজন করা। পরে নিজেদের বক্তৃতার সময় সুপারিশগুলোর বেশির ভাগের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতারা একমত পোষণ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেন, ‘শুধু সরকার কী করল আর নির্বাচন কমিশন কী করল, তার ওপর আগামী নির্বাচন নির্ভর করছে না। সবাই মিলে আমরা কী করলাম, তার ওপর সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নির্ভর করবে।’ তিনি বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক দলগুলোয় তরুণ নেতৃত্ব আসছে। তাদের হাত ধরে পরিবর্তন আসবে। আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য সরকার নির্বাচন কমিশনকে সব রকমের সহায়তা করবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রাজ্জাক বলেন, তারুণ্য দেশের প্রধান শক্তি। এই তারুণ্য দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। দেশের স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৌলিক কিছু জায়গায় সহনশীলতার প্রয়োজন আছে। এই সহনশীলতা নেই। এ জন্য কিছু ইস্যুতে দেশে বিভক্তি দেখা যায়। এই বিভক্তি দূর করতে হবে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সরকার বদ্ধপরিকর। নির্বাচনের সময় সরকারের কোনো ক্ষমতা থাকবে না, নির্বাচন কমিশনের অধীনে সরকার তাদের সহায়তা করবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, বিভাজনের মাধ্যমে কখনো গণতন্ত্র শক্তিশালী হয় না। আর সামরিক শাসন কখনো সমস্যার সমাধান করতে পারে না। এখন যা চলছে, তা হচ্ছে গণতন্ত্রের ভান করা—এটা গণতন্ত্র নয়। এ কারণে তরুণেরা সঠিক দিকনির্দেশনা পাচ্ছে না। সবার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে হলে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার কথা শুনে ভালো লেগেছে। তবে নির্বাচনের সময় সরকার নির্বাচন কমিশনের ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করবে নাম, এই প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেলে আরও ভালো লাগত।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোয় ৩৩ শতাংশ নারী এবং তরুণদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হলে রাজনৈতিক দলগুলোর তারুণ্য বেড়ে যাবে। যাঁদের বয়স হয়েছে, তাদের স্থানটি ছেড়ে দিতে হবে। এ জায়গায় যেন তরুণেরা জায়গা করে নিতে পারে। দেশে ছাত্রসংসদ নির্বাচন হচ্ছে না, এটা জরুরি। তিনি বলেন, ‘এখানে আমরা সবাই দায়ী। আমরা কেউই ছাত্র সংসদ নির্বাচন করতে পারিনি। এটা অনুষ্ঠান করা এবং যত দ্রুত সম্ভব করা উচিত।’ ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি বন্ধ করলে দেশ অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে বলে তিনি আশা করেন।

অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি কেটি ক্রোক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএসএআইডির মিশন ডিরেক্টর জেনিনা জেরুজেলস্কি। এ ছাড়া আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী, সংসদ সদস্য ওয়াসেকা আয়েশা খান, বিএনপির সহকারী আন্তর্জাতিক সম্পাদক রুমিন ফারহানা প্রমুখ।