সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

অনুষ্ঠানে পথশিশুরা নিজেদের আঁকা ছবিও প্রদর্শন করে। ছবি: হাসান রাজা
অনুষ্ঠানে পথশিশুরা নিজেদের আঁকা ছবিও প্রদর্শন করে। ছবি: হাসান রাজা

সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির মিলনায়তনের মঞ্চে এক ঝাঁক কচি মুখ। নীল পোশাক আর হাতে সাদা গ্লাডিওলাসে কক্ষটিজুড়ে শরতের আবহ। শিশুরা গাইতে শুরু করে জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’। তাদের সঙ্গে সুর মেলালেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

এভাবেই জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে সুইচ বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান-২০১৭ এর শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার সকালে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে রাজধানীর সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটির সোসিওলজি অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ।

জানা গেছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ২০১১ সাল থেকে সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের অধীনে নানা উন্নয়নমূলক সামাজিক কার্যক্রম যেমন পথশিশুদের শিক্ষাদান, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, বইমেলায় হুইলচেয়ারের মাধ্যমে সেবা দেওয়াসহ নানা কাজ করছে।

এসব কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে সুইচ বিদ্যানিকেতন। এখানে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিপড়ুয়া মোট ৭৭ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পারভীন হাসান বলেন, দুর্নীতি, লুটপাট, চাঁদাবাজিসহ নানা কারণে তরুণেরা নতুন কিছু শুরু করলে সবাই অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে দেখেন। সেখানে গুটিকয়েক তরুণের প্রচেষ্টায় বেশ কিছু সুবিধাবঞ্চিত পথশিশুর জীবনে শিক্ষার আলো এসেছে, যা প্রশংসনীয় এবং অনুকরণীয়। তিনি আরও বলেন, তরুণেরা এভাবে কাজ করে গেলেই সমাজের উন্নয়ন হবে।

এরপর উপাচার্য পারভীন হাসান সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. মুইনুল ফয়সালের কাছ থেকে স্কুলের শিক্ষার্থী, তাদের স্কুলে নিয়ে আসার গল্প এবং স্কুলটির কার্যক্রম সম্পর্কে জানেন। বিশদভাবে খোঁজখবর নিয়ে উপাচার্য তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্থানীয়ভাবে এ রকম একটি সামাজিক কার্যক্রম পরিচালনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

বিদ্যানিকেতন স্কুল শুরুর প্রেক্ষাপট এবং পরিচালনার বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করেন মো. মুইনুল ফয়সাল। পথশিশুদের নিয়ে তিনি খুব আশাবাদী। বলেন, এসব শিশুর মধ্যে রয়েছে অকল্পনীয় প্রতিভা। ওদের সহযোগিতায় সবাই একটু এগিয়ে এলেই দ্রুত স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।

এরপর অনুষ্ঠানে দলগতভাবে শিশুরা ‘এই পদ্মা, এই মেঘনা’ গানটি পরিবেশন করে। মিলনায়তনজুড়ে শিশুদের প্রশংসায় নানা শব্দ ভেসে বেড়ায়। এমন আবহ শেষ না হতেই ‘মাঠের সবুজ থেকে সূর্যের লাল, বাংলাদেশের বুক এতই বিশাল’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে এক শিশু। মুহুর্মুহু করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে মিলনায়তন।

শেষাংশে পারিবারিক সহিংসতা এবং নারী-পুরুষের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি নাটিকাও মঞ্চায়িত হয়। এ ছাড়া তাদের আঁকা ছবিও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মোট ৩৮ জন শিশু অংশ নেয়। সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুর স্বপ্ন অনেক। এ স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী আয়শা আক্তার বলে, ‘আমি বড় হয়ে শিক্ষক হব। সবাইকে ফ্রি পড়াব।’

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়টির সোসিওলজি অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক জোবায়রা বিশ্বাস।