'আপনারা আসেন, স্যারদের মুখটা জাতি দেখুক'

রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধার সামনে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের উদ্যোগে উল্টো পথে চলা গাড়ি ও মোটরসাইকেল আটকায় পুলিশ। দুই ঘণ্টার ওই অভিযানে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে ৫০টি যানবাহনকে। এগুলোর মধ্যে ৪০টিই সরকারি গাড়ি। ছবি: সাইফুল ইসলাম
রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধার সামনে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের উদ্যোগে উল্টো পথে চলা গাড়ি ও মোটরসাইকেল আটকায় পুলিশ। দুই ঘণ্টার ওই অভিযানে মামলা ও জরিমানা করা হয়েছে ৫০টি যানবাহনকে। এগুলোর মধ্যে ৪০টিই সরকারি গাড়ি। ছবি: সাইফুল ইসলাম

মামলা দিতে দুজন পুলিশের সার্জেন্ট হাতের যন্ত্র নিয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে। আরও কয়েকজন গাড়ি আটকে চালকের কাছে জানতে চাইছেন, ‘এটা কোনো স্যারের গাড়ি?’ উৎসুক দর্শকও জুটেছেন। ক্যামেরা-নোটবুক হাতে ছোটাছুটি করছেন কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী।

প্রায় প্রতিদিন অফিস শেষে সরকারি গাড়িগুলো উল্টো পথে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বাড়ির পথ ধরে। গতকাল রোববার তাঁদের ধরতে রমনা পার্কের উল্টো দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন সুগন্ধার সামনে ফাঁদ পেতে বসেছিল পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের একটি দল।

পুলিশ জানিয়েছে, দুই ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ের অভিযানে মোট ৫৭টি গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা ও সাতটি গাড়ির কাছ থেকে রেকার বিল আদায় করা হয়। যার মধ্যে ৪০টির বেশি ছিল সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। উল্টো পথে চলা শাস্তি পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিল প্রতিমন্ত্রী, সাংসদ, সচিব, প্রকৌশলী, রাজনীতিবিদ, পুলিশ, সাংবাদিক, বিচারক ও ব্যবসায়ীদের গাড়ি।

পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল বিকেল চারটার দিকে সুগন্ধার সামনে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ উপস্থিত হন। তাঁর উপস্থিতিতেই পুলিশ এ অভিযান শুরু করে।

তবে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন,  বেআইনিভাবে উল্টো পথে চলা গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করেন দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তিনি সেখানে আধা ঘণ্টার বেশি সময় ছিলেন।

গতকাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সুগন্ধার সামনে গিয়ে দেখা যায় ১০-১২টি ঢাউস আকারের গাড়ি জমে গেছে। পাজেরো, প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার, নিসান প্যাট্রলের মতো সব দামি গাড়ি। সব কটিই সরকারি। এক কোনায় ছিল বেসরকারি টেলিভিশন জিটিভির লোগো লাগানো একটি লাল রঙের সুজুকি সুইফট কার। সরকারি–বেসরকারি সব চালকই গাড়ি থেকে নেমে গাড়িতে বসে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম নিচ্ছিলেন। কিন্তু পুলিশ কিছুই শুনছে না। একের পর এক মামলা দেওয়া চলছে। কোনো চালক অনুরোধ করছেন, এমনভাবে মামলা দিতে যাতে তাঁর চাকরি না যায়।

পুলিশ কর্মকর্তারা চালকদের দাবড়ে বলছিলেন, ‘আইজকা কোনো মাফ নাই। দ্যাখেন না সব বড় বড় স্যারেরা আইসা পড়ছে। দুদকের চেয়ারম্যান স্যার আসছিলেন। প্রতিমন্ত্রীর গাড়িরেও আইজকা মামলা দিছি। প্রতিদিন তো উল্টো যান, আইজকা একটা মামলা নিয়া যান।’

পুলিশের কর্মকাণ্ড দেখে সেখানে ভিড় জমায় পথচলতি মানুষ। রমনা পার্কে সন্ধ্যাকালীন হাঁটতে বের হওয়া একজন বললেন, ‘দ্যাখছেননি পুলিশের। চোরের দশ দিন আর গৃহস্থের এক দিন এইডারেই কয়। প্রতিদিন উল্টো দিকে যায়। দ্যাশে যে আইন আছে ভুইলা গেছিলাম।’

এদিকে সরকারি গাড়িগুলো ধরার পরে পুলিশ কর্মকর্তারা গণমাধ্যমকর্মীদের আগে ডাকছিলেন। ক্যামেরার সামনে তাঁরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুখোমুখি হতে চাচ্ছিলেন।

পরিদর্শক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা অভিযানে সঙ্গ দিতে অনুরোধ করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকেরা) আসেন। আমাদের একটা মামলা বা দেড়-দুই হাজার ফাইনে তো স্যারদের কিছু আসবে–যাবে না। আপনারা যদি স্যারদের জাতিদের সামনে দেখাতে পারেন তাতেই কাজে দেবে।’

এ সময় ক্যামেরা দেখে অনেক কর্মকর্তাই মুখ লুকান। কেউই কিছু বলতে চাননি। চালকদের কেউ কেউ ‘ক্যামেরার সামনে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন।’