কমিউনিস্ট নেতা জসিম উদ্দিন মণ্ডল আর নেই

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা জসিম মণ্ডল। ছবি: আবদুস সালাম
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য, প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা জসিম মণ্ডল। ছবি: আবদুস সালাম

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির সদস্য প্রবীণ রাজনীতিক ও প্রখ্যাত শ্রমিকনেতা কমরেড জসিম উদ্দিন মণ্ডল আর নেই (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

রাজধানীর গ্রিনরোডে পান্থপথের হেলথ অ্যান্ড হোম নামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সোমবার ভোর ছয়টায় তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। তাঁর নাতনি আফরোজ রূপা ও পাবনা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব প্রথম আলোকে জসিম উদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জসিম মণ্ডলকে গতকাল রোববার দুপুরে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।

আফরোজ রূপা প্রথম আলোকে জানান, জসিম উদ্দিন বেশ কিছুদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন। তাঁর নিয়মিত প্রস্রাব হচ্ছিল না। প্রস্রাবের সময় প্রচণ্ড জ্বালা-যন্ত্রণা করত। কিছু খেতেও পারছিলেন না। চলাফেরাও বন্ধ হয়ে যায়। স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়ে দিন দিন শরীর শুকিয়ে যাচ্ছিল। এ অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার সকালে ঈশ্বরদী শহরের পশ্চিম টেংরীর তাঁর নিজ বাড়ি থেকে সিপিবির তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল রোববার দুপুর থেকে তাঁর অবস্থার অবনতি ঘটে। তাঁকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এর আগেও তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ১ আগস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁকে ভর্তি করা হয়। সেখানে ২০ দিন থাকার পর তাঁকে ঈশ্বরদীতে আনা হয়। এখানে আনার পর তাঁর শারীরিক অবস্থার আবারও অবনতি ঘটে।

জসিম মণ্ডল পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলের জনক। স্ত্রী জাহানারা বেগম গত বছর ১৩ জানুয়ারি এবং একমাত্র ছেলে কয়েক বছর আগে মারা যান।

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জসিম উদ্দিন মণ্ডল ১৯২৪ সালে বর্তমান কুষ্টিয়া জেলা ও তৎকালীন অবিভক্ত ভারতের নদীয়া জেলার কালিদাসপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৯ সালে তিনি রেলইঞ্জিনে কয়লা ফেলার চাকরি পান। সে সময় শ্রমিক শোষণের চিত্র দেখে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। তিনি ব্রিটিশ রেল কোম্পানির শ্রমিক শোষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। কিশোর বয়স থেকে জসিম উদ্দিন মণ্ডল ভারতের মহাত্মা গান্ধী, বাঘাজতীন, প্রীতিলতা, জ্যোতি বসু, কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য, বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলামসহ প্রখ্যাত মানুষের সান্নিধ্য পান। ষাটের দশকে রেলওয়েতে চালের বদলে খুদ দেওয়ায় তিনি রেল শ্রমিকদের নিয়ে প্রতিবাদ ও আন্দোলন করেন। এতে তাঁর চাকরি চলে যায়। তিনি শ্রমিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। আন্দোলন করতে গিয়ে একাধিকবার কারাবরণ ও ব্রিটিশ সরকারের নির্যাতনের শিকার হন। আন্দোলন সংগ্রাম করতে গিয়ে তিনি মোট ১৯ বছর কারাভোগ করেন।

জসিম উদ্দিন মণ্ডলের নিজস্ব কোনো বাড়ি নেই। বন্দোবস্ত নেওয়া সরকারি এক খণ্ড জায়গায় তিনি বসবাস করতেন। বাড়ির পাশেই নিজ উদ্যোগে ১৯৯৬ সালে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলেন। পরবর্তী সময় বিদ্যালয়টি সরকারীকরণ হয়। বিদ্যালয়ের নাম পশ্চিম টেংরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, জসিম উদ্দিন মণ্ডলের মরদেহ হেলথ অ্যান্ড হোম হাসপাতাল থেকে নিয়ে আজ ঢাকায় হিমঘরে রাখা হবে। আগামীকাল মঙ্গলবার পল্টনে সিপিবির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের নেতা-কর্মীরা তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। জোহর নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। মঙ্গলবার রাতে তাঁর মরদেহ ঈশ্বরদীতে আনা হবে। পরদিন বুধবার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হবে।