দুই বছর ধরে সুড়ঙ্গ খুঁড়েছিলেন হাবিব

কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় চুরির ঘটনায় গ্রেপ্তার হাবিবুর রহমান হাবিব র‌্যাবকে জানান, দুই বছর আগে থেকেই তিনি বাড়ি থেকে সোনালী ব্যাংক পর্যন্ত সুড়ঙ্গ কাটা শুরু করেন। হাতুড়ি ও ছেনি দিয়ে সুড়ঙ্গ কাটেন তিনি। দিনের বেলায় তিনি সুড়ঙ্গ কাটার কাজ করতেন। কারণ দিনে যানবাহনের আওয়াজে কোনো শব্দ শোনা যায় না।

সোনালী ব্যাংকে টাকা চুরির ঘটনায় আজ মঙ্গলবার রাজধানী শ্যামপুর এলাকা থেকে হাবিবুর রহমান হাবিব ওরফে সোহেল রানা ও তাঁর সহযোগী ইদ্রিস মিয়াকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তারের পর রাজধানীর উত্তরায় র‌্যাবের কার্যালয়ে তাঁদের হাজির করা হয়। সেখানে হাবিব এসব কথা জানান।

র‌্যাবকে হাবিব জানান, তিনি দুবাইতে নির্মাণশ্রমিকের কাজ করতেন। দেশে ফিরে তাঁর মামাশ্বশুর সিরাজকে পাঁচ লাখ টাকা ধার দেন। সিরাজ ওই টাকা শোধ করতে না পেরে হাবিবকে কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা লুটের পরামর্শ দেন। টাকা চুরির উদ্দেশ্যে কিশোরগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখার পাশে দুই বছর আগে টিনশেডের একটি বাড়ি ভাড়া নেন তিনি। বাড়ির ভাড়া ছিল আড়াই হাজার টাকা।

হাবিব জানান, সুড়ঙ্গ কাটতে কাটতে দেড় বছর পর তিনি সোনালী ব্যাংকের ভেতরে পর্যন্ত পৌঁছানোর রাস্তা তৈরি করে ফেলেন। সুড়ঙ্গ দিয়ে ব্যাংকের ভেতরে গিয়ে তিনি একটি আলমারি দেখতে পান।  শাবল দিয়ে ওই আলমিরা সরিয়ে ব্যাংকের ভেতরে ঢুকে পড়েন তিনি। ব্যাংকে ঢুকে তিনি দেখেন টেবিলে ওপরে টাকা স্তূপ করে রাখা। তা দেখেই আবার সে সুড়ঙ্গ দিয়ে বাসায় ফিরে যান। ওই দিন ছিল শুক্রবার। বাসায় ফিরে বাইরে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করেন তিনি। খাওয়া-দাওয়ার পর আগে থেকে ঘরের মধ্যে রাখা সাত-আটটি বস্তা নিয়ে তিনি আবার রাত ১০টার দিকে সুড়ঙ্গে দিয়ে ব্যাংকে ঢোকেন। হামাগুড়ি দিয়ে একসঙ্গে দুটি করে দুবারে চারটি এবং শেষে একটিসহ মোট পাঁচটি টাকার বস্তা ঘরে আনেন। এরপর এক হাজার ও ৫০০ টাকার নোট আলাদা করেন। তিনটা বস্তায় এক হাজার টাকার নোট এবং দুটিতে ৫০০ টাকার নোট ভরেন। বস্তায় নোট ভরতে ভরতে শনিবার ভোর হয়ে যায়। সকালে তিনি বাড়ির পাশের একটি চালের দোকানে যান। সেখানে কিছু কথা বলে আবার বাসায় ফিরেন। আবার ওই চালের দোকান এবং পাশের আর একটি দোকান থেকে ২৩০ বস্তা চাল কেনেন। এরপর ১২ হাজার টাকায় ঢাকা আসার জন্য ট্রাক ভাড়া করেন। টাকার বস্তাগুলো প্রথমে অর্থাত্ নিচে রেখে তার ওপর চালের বস্তা রাখা হয়। চালের ও টাকার বস্তা ট্রাকের ওঠাতে হাবিবকে সাহায্য করেন চালকের সহকারী। আসার পথে নরসিংদীতে ট্রাক পাংচার হয়। চালকের সহকারী আগেই টের পান বস্তায় বিপুল পরিমাণ টাকা আছে। এ জন্য হাবিব চালকের মুখ বন্ধ করতে তাঁকে সাত লাখ টাকা দেন (৫০০ টাকা ১৪টি বান্ডিল)।

হাবিব জানান, ঢাকার শ্যামপুর এলাকায় আসার পরে তিনি বাসা খুঁজতে থাকেন। সৌভাগ্যক্রমে শ্যামপুর বালুরঘাট এলাকায় ছয় তলা একটি বাসা সাড়ে আট হাজার টাকায় ভাড়া নেন তিনি। আট বস্তা চাল পাঁচ বস্তা টাকা নিয়ে তিনি বাসায় ওঠেন। মামা শ্বশুরের পরামর্শে বাকি চাল আটরশির একটি ওরসে পাঠিয়ে দেন। একটি কক্ষে চালের বস্তা ও অপর কক্ষে টাকার রাখেন। এরপর অপর মামাশ্বশুর ইদ্রিসকে গত রোববার খবর দেন। ইদ্রিস রোববারের পর থেকে তাঁর সঙ্গে আছেন বলেও জানান হাবিব।

হাবিব জানান, ব্যাংকের টাকা লুটের প্রলোভন ও পরামর্শ দেওয়া মামাশ্বশুরের ফোন রোববার থেকে বন্ধ।

আজ দুপুরের দিকে অভিযান চালিয়ে শ্যামপুর বাজার থেকে হাবিবকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সঙ্গে ইদ্রিসকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব জানায়, হাবিবুর রহমান হাবিব ওই বাসা সোহেল নামে ভাড়া নেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি মোস্তাফিজুর রহমান লুট হওয়া টাকার উদ্ধার হওয়ায় র‌্যাব এবং গণমাধ্যমের কর্মীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।

এর আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান। এ দুঃসাহসিক চুরির ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত কি না, জানতে চাইলে র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ব্যাংকের কোনো কোনো কর্মকর্তার প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি প্রমাণ হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।