প্রধান বিচারপতি সত্য কথাগুলো বলে দিয়েছেন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিদেশ যাওয়ার আগে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিবৃতি দিয়ে সত্য কথাগুলো বলে দিয়েছেন। এতে প্রমাণিত হয়েছে, সরকারের ইনটেশনটা (অভিপ্রায়) কী।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন। আগামীকাল রোববার সকালে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নেবে বিএনপি। তিনি এ বিষয়েও কথা বলেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘প্রধান বিচারপতির বিবৃতির মধ্যে একটা জিনিস বেরিয়ে এসেছে। কথাটা সিগনিফিকেন্ট যে সরকারকে ভুল বোঝানো হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী অভিমান করেছেন। এ জিনিসটাকে আমরা সিরিয়াসলি (গুরুত্বসহকারে) দেখছি যে সরকারে কে ভুল বোঝাচ্ছে? কারা সেদিন প্রধান বিচারপতিকে অফিস ছেড়ে যেতে বাধ্য করল? যেদিন তাঁর জয়েন (যোগদান) করার কথা। কারা ফলস ডকুমেন্ট (ভুয়া নথি) তৈরি করল?’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি ছুটিতে যাওয়ার পরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রী কয়েক ঘণ্টা বসেছেন। বেরিয়ে এসে বলেছেন, বিচার বিভাগ কীভাবে চলবে, কর্মকর্তাদের নিয়োগ—এসব ব্যাপারে আলাপ করেছি। এটা সরাসরি বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ। প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে আর কারও এখতিয়ার নেই সেখানে হাত দেবেন।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনার পর কী শুরু হয়েছে। আমরা যেটা আশঙ্কা করেছিলাম যে বিচার বিভাগ আর একেবারেই স্বাধীন থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন, আইন মন্ত্রণালয় যা বলবে, সেটাই করবে। তার প্রমাণ হচ্ছে, কোনো রকমের আইন-কানুনের বাছবিচার না করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট (পরোয়ানা) জারি।’ তিনি বলেন, আইন বলছে, উচ্চ আদালতে একটা মামলা বিচারাধীন থাকলে সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাধারণত সেই মামলা নিম্ন আদালতে স্থগিত থাকবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলাগুলো চলছে, তার মধ্যে দুটো মামলা হাইকোর্টে সিদ্ধান্তের ব্যাপারে পেইন্ডিং আছে। কোনো শুনানি হয় হয়নি, ওয়ারেন্ট জারি করে দেওয়া হয়েছে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এর পেছনে একটা জিনিস পরিষ্কার যে তারা খুব দ্রুত এ মামলাটা নিষ্পত্তি করতে চায়। তারা প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রীকে সাজা দিতে চায়। এটা দেশের মানুষ বোঝে। এসব করে কখনো কোনো লাভ হয় না, বরং ক্ষতি হয়।

এত দিন নিম্ন আদালতের ওপর সরকারের প্রভাবের কথা বলেছেন, এখন প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের পরে আপনারা কী আশঙ্কা করছেন যে উচ্চ আদালতের ওপর সরকারের কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়েছে? সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘ইতিমধ্যে প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেই দিয়েছেন, এখন সর্বোচ্চ আদালতের ওপর সরকার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে, করে দিয়েছেন, এখানে আমাদের নতুন করে কিছু বলার নেই। যেকোনো বুদ্ধিমান লোক, যাঁরা এটা (বিবৃতি) পড়বেন, তাঁরা খুব পরিষ্কার করে বুঝে যাবেন যে হোয়াট সারকামসটেন্সেস চিফ জাস্টিস হ্যাভ টু লিভ? অ্যান্ড হোয়াট ইজ গোয়িং টু হ্যাপেন। দিস স্টেটমেন্ট হ্যাজ স্টেটেড দ্য ফ্যাক্ট। তিনি সত্য কথাগুলো বলে দিয়েছেন। প্রমাণিত হয়েছে, সরকারের ইনটেশনটা কী।’

প্রশ্ন ছিল, প্রধান বিচারপতি ছুটি শেষে আবার স্বাধীনভাবে যাতে দায়িত্ব পালন করতে পারেন, বিএনপি এ দাবি করবে কি না। জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই। আমাদের তরফ থেকে এ দাবি থাকবে যে যার যা কাজ, সেটা যেন তিনি স্বাধীনভাবে করতে পারেন।’

বিএনপি কি প্রধান বিচারপতি ছুটিতে ষোড়শ সংশোধনীর রায় পরিবর্তনের আশঙ্কা করে? এবং সে কারণেই কি প্রধান বিচারপতিকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে? এর জবাবে ফখরুল বলেন, ‘এটা অনেকে আশঙ্কা করছেন, আমরাও একই আশঙ্কা করছি। রায় পরিবর্তন বা এক্সপাঞ্জ করা হতে পারে। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন ওই জায়গায় না। আমাদের প্রশ্ন, আপনি বিচার বিভাগকে স্বাধীন রাখতে চান কি না। এটা আমাদের মৌলিক প্রশ্ন। রায় কী হলো, না হলো এটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।’

নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা নেই
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা পরিষ্কার বলে দিয়েছি যে এই নির্বাচন কমিশনের ওপর আমাদের আস্থা নেই। জিজ্ঞেস করবেন, আপনারা যাচ্ছেন কেন? এ ছাড়া তো এই মুহূর্তে আমাদের কাছে বিকল্প কিছু নেই। আমরা নির্বাচনের কমিশনের কাজগুলো এগজস্ট করতে চাই। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, রীতিনীতি-নিয়ম যা আছে, আমরা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে চাই।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা কমিশনকে বলতে চাই, তুমি সঠিকভাবে চলো। সংবিধান তোমাকে যে দায়িত্ব ও ক্ষমতা দিয়েছে, তাতে তুমি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারো। কিন্তু দুর্ভাগ্য আমাদের, যাঁরা এ দায়িত্বে আসেন, তাঁরা এত বেশি বশংবদ হয়ে যান, যার জন্য সব সময় এটা করতে পারে না। আমরা কাল যাব। এখন তাঁরা কীভাবে রিঅ্যাক্ট করবেন, সেটা তাঁদের দায়িত্ব।’