দুবলারচরে জড়ো হচ্ছেন জেলেরা

দুবলারচরে প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে শুঁটকি দেওয়ার মৌসুম। প্রথম আলো ফাইল ছবি
দুবলারচরে প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে শুঁটকি দেওয়ার মৌসুম। প্রথম আলো ফাইল ছবি

বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চিলা খাল থেকে গত রোববার ভোরে তিন শতাধিক জেলে সুন্দরবনের দুবলারচরের উদ্দেশে গেছেন। বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকূলসংলগ্ন এই চরে প্রতিবছর অক্টোবরের শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলে শুঁটকি দেওয়ার মৌসুম। এ উপলক্ষে জেলেদের এই যাত্রা।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মোংলা থেকে নদীপথে দুবলা জেলেপল্লির দূরত্ব প্রায় ৯০ নটিক্যাল মাইল। বঙ্গোপসাগরে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ উপকূলের জেলেরা দুবলারচরে জড়ো হচ্ছেন। প্রতিবছর এই মৌসুমে মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, ছাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদেখালী চরে প্রায় ২০ হাজার জেলে জড়ো হন। সম্মিলিতভাবে এ চরগুলোকে দুবলারচর বলা হয়। তাঁরা সমুদ্র মোহনায় বেহুন্দি জাল দিয়ে নানা প্রজাতির মাছ শিকার ও বাছাই করে এসব চরে শুঁটকি দেন। এ জন্য জেলেরা নিজেদের থাকা এবং মাছ ধরার সরঞ্জাম রাখা ও শুঁটকির জন্য অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করেন।

দুবলারচরের উদ্দেশে যাত্রা করা মোংলার জয়মনির আবুল, চিলার তাহের, চাঁদপাই গ্রামের আবদুল্লাহ, রামপাল উপজেলার পেড়িখালী গ্রামের রুহোলসহ অনেক জেলে বলেন, ‘বনদস্যুদের বিরুদ্ধে র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান চলছে। তাই এবার দস্যু আতঙ্ক নেই। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখেই আমরা দুবলার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছি। প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, চলতি মৌসুমে আমরা যাতে নির্বিঘ্নে ও নিরাপদে মাছ শিকার ও শুঁটকি দিতে পারি, সেই ব্যবস্থা যেন করা হয়।’

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘প্রতিবছরের মতো এবারও জেলেদের নিরাপত্তার জন্য আমরা কঠোর নিরাপত্তা গ্রহণ করেছি। সুন্দরবনে জেলেদের ওপর বনদস্যুদের হামলা ও আক্রমণ থেকে রক্ষায় র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), কোস্টগার্ড, পুলিশ ও বন বিভাগ সমন্বিতভাবে অভিযান পরিচালনা করছে। আবার জেলেরা যাতে সুন্দরবনের বনজ সম্পদ ধ্বংস করে থাকার ঘর নির্মাণ না করেন, সে জন্য তাঁদের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘গত অর্থবছরে আমাদের রাজস্ব আয় ছিল প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ বছর আমরা আরও বেশি আশা করছি।’

মোংলা কোস্টগার্ড পশ্চিমাঞ্চলের অপারেশন কর্মকর্তা লে. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘শুঁটকি মৌসুমে জেলেদের নিরাপত্তার জন্য দুবলারচরে আমাদের ক্যাম্পে জনবল বাড়ানো হয়েছে। সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলেদের সুন্দরবনে যাওয়ার পথে নিরাপত্তা দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের নিরাপত্তা বোটগুলো সার্বক্ষণিক কাজ করছে। এ ছাড়া জেলেদের কাছে আমাদের মুঠোফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। যেকোনো বিপদে আমাদের জানালে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আর সুন্দরবনের দস্যু দমনে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’