বিধি লঙ্ঘন করে একসঙ্গে দুই পদে

তিনি বরিশালের গৌরনদী উপজেলার চাঁদশী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। একই সঙ্গে উজিরপুরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকও। বিধি লঙ্ঘনের এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ করা হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ওই ব্যক্তি হলেন চাঁদশী ইউপির ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য এস এম লিটন। তিনি উজিরপুরের হস্তীশুণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও সহকারী শিক্ষক।

বিদ্যালয়টির শিক্ষক, স্থানীয় লোকজন ও চাঁদশী ইউপি সূত্রে জানা যায়, এস এম লিটন ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউপি নির্বাচনে চাঁদশী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে তিনি ইউপি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি উজিরপুরের সাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন। এরপরও তিনি ইউপির নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও বৈঠকে যোগ দেন। তিনি সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক পরিষদের সব কার্যক্রমে অংশ নেন ও কাগজপত্রে সই করেন। গত ৭ মে তিনি বদলি হয়ে হস্তীশুণ্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসেন।

চাঁদশী এলাকার মো. রতন মিয়া বলেন, একই ব্যক্তি কী করে একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি চাকরি করেন। সরকারি চাকরির বিধিমালা ও জনপ্রতিনিধিত্ব আইন লঙ্ঘন করার অপরাধে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হস্তীশুণ্ড বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, এস এম লিটন প্রায়ই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

গত বুধবার বেলা আড়াইটায় বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষক এস এম লিটনকে পাওয়া যায়নি। তখন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক নূপুর কর্মকার বলেন, লিটন বিদ্যালয়েই রয়েছেন। হয়তো পাশে খাবার খাচ্ছেন।

এ সময় এস এম লিটনকে মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি নিজেকে চাঁদশী ইউপির সদস্য পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমি পরিষদের কাজে বরিশাল রওনা হয়ে গাড়িতে আছি। দুই পদে থাকা অবৈধ কি না, তা আমি জানি না। খুব শিগগিরই ইউপি সদস্য থেকে পদত্যাগ করব।’

পরে প্রধান শিক্ষক নূপুর কর্মকার বলেন, ‘লিটন ইউপি সদস্য কি না, আমার জানা নেই। তিনি প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন। এ কারণে তাঁর হাজিরা খাতায় আমি লাল কালি দিয়ে দাগ দিয়ে রাখি। অনুপস্থিতির কারণে তাঁর বেতনও কাটা হয়েছে।’

বিদ্যালয়টির পরিচালনা কমিটির কয়েকজন সদস্য বলেন, লিটনকে কমিটির সভায় অনেকবার পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি করেননি।

জানতে চাইলে উজিরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সহিদুল ইসলাম গত রোববার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা চাকরিবিধির লঙ্ঘন। তবে আমার কাছে এ বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি। তা ছাড়া লিটন বিদ্যালয়ে যোগদানের পরই ইউপি সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন।’

চাঁদশী ইউপির চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত দে গতকাল সোমবার বলেন, ‘লিটনের সরকারি চাকরি হওয়ার কথা লোকমুখে শুনেছি। তবে তিনি আমাকে এ বিষয়ে কিছু বলেননি। সদস্যপদ থেকে পদত্যাগও করেননি।’