মিয়াদের 'পেটে' যমুনার বালু

যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। ফুটানি বাজার এলাকা, দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর। ছবি: প্রথম আলো
যমুনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। ফুটানি বাজার এলাকা, দেওয়ানগঞ্জ, জামালপুর। ছবি: প্রথম আলো

জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় যমুনা নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য এর সঙ্গে জড়িত। তাঁদের মধ্যে আছেন রং মিয়া ও সাদা মিয়া।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে হুমকির মুখে পড়ছে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হয়। সর্বশেষ ১০ অক্টোবর বাহাদুরাবাদ ঘাট এলাকায় এক ব্যক্তিকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কিন্তু ধারাবাহিক নজরদারি না থাকায় নদী থেকে বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছে না। বর্তমানে উপজেলার ফুটানি বাজার নৌকাঘাট থেকে বালুগ্রাম দক্ষিণপাড়া পর্যন্ত ছয় কিলোমিটারে অন্তত পাঁচটি স্থান থেকে বালু তোলা হচ্ছে।

ফুটানি বাজার এলাকার আবদুল হক বলেন, বালু উত্তোলনকারী ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে কেউ কিছু বলতে সাহস পান না। এভাবে চলতে থাকলে বর্ষা মৌসুমে ভাঙন ভয়াবহ রূপ নেবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বালু তোলা বন্ধ হওয়া দরকার। অন্যথায় এলাকার ফসলি জমিসহ ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফুটানি বাজার এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের কাছে ড্রেজার (খননযন্ত্র) বসিয়ে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। তীরে বালুর স্তূপ। সেখান থেকে কয়েকজন শ্রমিক ভটভটিতে (ইঞ্জিনচালিত তিন চাকার যান) করে বালু নিয়ে যাচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চুকাইবাড়ী ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রং মিয়া সেখানে বালুর স্তূপ করেছেন। এর দক্ষিণ পাশে পাউবোর বাঁধের খুব কাছ থেকে বালু তোলা হচ্ছে। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছেন সাদা মিয়া নামের এক ব্যক্তি। তিনি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফখরুল ইসলামের ছেলে।

ফুটানি বাজার এলাকায় কথা হয় বালু উত্তোলন শ্রমিক চান মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রতিটি ঘাট থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ ভটভটি বালু বিক্রি হয়ে থাকে। প্রতিটি ভটভটির বালু ৩০০ টাকায় বিক্রি করা হয়। তাঁদের প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে মজুরি দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের ভাতিজা রাসেল মিয়া বালুগ্রাম দক্ষিণপাড়ায়, পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ধলু মিয়া ডাকপাড়া গ্রামে ও ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তমছের আলী ফুটানি বাজার এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে বালু তুলছেন।

রং মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো অল্প বালু তুলি। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাতিজা রাসেল মিয়া বড় ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে বিক্রি করছেন। প্রশাসনের সবাই তো জানে। তাঁরা বন্ধ করে দিলে আমরা বালু তুলব না। তা ছাড়া আমি নৌকা দিয়ে অনেক দূর থেকে বালু নিয়ে আসি। সাদা মিয়া নতুন বাঁধের কাছ থেকে বালু তুলছেন। পাউবোকে জানালেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।’ তবে রাসেল মিয়া বলেন, আগে তিনি বালু উত্তোলন করতেন। প্রশাসনের নির্দেশে তা বন্ধ রেখেছেন। সব ড্রেজার তিনি বাড়িতে রেখে দিয়েছেন।

ধলু মিয়া বলেন, ‘আগে বালু তুলতাম। প্রশাসনের লোকজন নিষেধ করার পর ওই কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।’

বালুগ্রাম এলাকার রাশেদুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধটি এখন হুমকির মুখে। সবাই জানেন কারা এর সঙ্গে জড়িত। তাঁরা খুব প্রভাবশালী। আমাদের কথা কেউ শুনবে না। বরং তাঁদের কথা শুনবে। আপনার সঙ্গে এখন যে কথা বলছি, কেউ দেখলে বিপদে পড়তে হবে।’

পাউবোর জামালপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার চৌধুরী বলেন, ‘বাঁধের কাছ থেকে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। খোঁজখবর নিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, কয়েক দিন আগে যমুনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত তিনটি খননযন্ত্র জব্দ করা হয়েছে। প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।