নিজামী সবকিছু অবগত ছিলেন

১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের বিষয়ে সবকিছু তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী অবগত ছিলেন বলে জবানবন্দিতে জানিয়েছিলেন সাবেক শিল্পসচিব শোয়েব আহাম্মদ। তিনি ২০১০ সালের ১০ জুলাই আদালতে ১৬৪ ধারায় ওই জবানবন্দি দেন।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা শোয়েব আহাম্মদ জবানবন্দিতে বলেছেন, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে ওই অস্ত্র আটকের সময় তিনি শিল্পসচিব ছিলেন। ২ এপ্রিল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন তিনি মিন্টো রোডের বাসায় ছিলেন। সকাল ১০টা-সাড়ে ১০টার দিকে ফোন করে বিসিআইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামান তাঁকে অস্ত্র আটকের বিষয়টি জানান এবং বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ডিজিএফআই ও এনএসআইয়ের লোকজন সেগুলো ঘিরে রেখেছে। সিইউএফএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাঁকে ফোনে এসব জানিয়েছেন। সিইউএফএল বিসিআইসির অধীনস্থ কারখানা। এতে ওই কারখানার কারও সম্পৃক্ততা বা শৈথিল্য আছে কি না, তা নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে তিনি ইমামুজ্জামানকে বলেন। ইমামুজ্জামান বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে জানিয়েছেন বলে জানান।

জবানবন্দিতে শোয়েব আহাম্মদ বলেন, ৪ এপ্রিল (রোববার) তিনি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিল্পমন্ত্রীর (নিজামী) কক্ষে যান। একপর্যায়ে তিনি ইমামুজ্জামানের ফোনের বিষয়টি মন্ত্রীকে জানান। তিনি কথা শেষ করার আগেই মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে সবকিছু অবগত আছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা সরাসরি অ্যাকশনে নেমেছে, জিজ্ঞাসাবাদ করছে। সিইউএফএলের কেউ জড়িত কি না, তা তারাই বের করতে পারবে। শিল্প মন্ত্রণালয়কে আলাদাভাবে কিছু করতে হবে না।’ একপর্যায়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের হাইয়েস্ট অথরিটিও এ বিষয়ে অবগত আছে। সরকার সব ব্যবস্থা নিচ্ছে। আপনি কি মনে করেন, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলি নাই।’ প্রসঙ্গত, ওই সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন না, প্রধানমন্ত্রী ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপের সময় আমি তাঁকে আরেকটি কথা বলি ওই দিনের একটি সংবাদের ওপর।

জবানবন্দিতে সাবেক ওই সচিব আরও বলেন, তিনি মন্ত্রীকে ঘটনার রাতে মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব নুরুল আমিনের সিইউএফএলের রেস্ট হাউসে অবস্থান করা সম্পর্কে পত্রিকায় সংবাদ হওয়ার বিষয়টি জানান এবং বলেন ভারপ্রাপ্ত সচিবের ওই সফর সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। এতে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি তো সরকারি কাজে বেশ কিছুদিন বিদেশে ছিলেন, এ সময় অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। সেভাবেই হয়তো তিনি এ ট্যুরে গিয়ে থাকবেন।’ ওই দিনও (৪ এপ্রিল) তাঁর না ফেরা এবং অস্ত্রের ঘটনাটি তাঁকে না জানানোর বিষয়টি মন্ত্রীকে জানালে তিনি বলেন, ‘এটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন। সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।’ তিনি আধা ঘণ্টা পর ইমামুজ্জামানকে মন্ত্রীর কক্ষে পাঠান। ২০-২৫ মিনিট পর ইমামুজ্জামান ফিরে এসে বলেন, তিনি অনেক বোঝালেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কাজ করছে বিধায় মন্ত্রী আলাদা কোনো ব্যবস্থা নিতে নিষেধ করেছেন। তিন-চার দিন পর ইমামুজ্জামান ফোন করে তাঁকে (শোয়েব) জানান, সিইউএফএল থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে অস্ত্র আটক বিষয়ে কিছুই বলা নেই। সেটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর মতো নয়। প্রতিবেদনটি অত্যন্ত দায়সারা গোছের। জবানবন্দিতে শোয়েব আহাম্মদ আরও বলেন, স্বরাষ্ট্রসচিব ওমর ফারুকের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থলে ও এর আগে বিভিন্ন জায়গায় গেছে। কিন্তু ওই কমিটি কখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। ওই বছরের ২৮ জুলাই তাঁকে অপ্রত্যাশিতভাবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। ঘটনার পর ওই তিন মাস শিল্প মন্ত্রণালয়ে থাকাকালে তাঁর কাছে বারবার মনে হয়েছে, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিছু একটা লুকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। মন্ত্রীর কথাবার্তা ও অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিনের রহস্যজনক আচরণ দেখে মনে হয়েছে, পুরো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।