রেলক্রসিং, যানজট এবং মাঠে সন্তান প্রসব

প্রসববেদনা নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন এক নারী। কিন্তু তাঁকে বহনকারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আটকে পড়ে রেলক্রসিংয়ের সিগন্যালে। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা আটকে থাকে সব যানবাহন। সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষের জন্যই এই অপেক্ষা অসহনীয়। আর অন্তঃসত্ত্বা মা? বেদনায় নীল হয়ে যাওয়া প্রসূতিকে নিয়ে অটোরিকশা থেকে নেমে পড়েন স্বজনেরা। সাহায্যে এগিয়ে আসেন আশপাশের নারীরা। পাশের মাঠে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। সেখানেই এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি।

ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল সোমবার বেলা দেড়টায়; নরসিংদী শহরের আরশীনগর রেলক্রসিংয়ে। নবজাতক ও মা—দুজনই সুস্থ আছে। সন্তান জন্মদানের পর বাড়ি ফিরে গেছেন প্রসূতি মা। তাঁর নাম স্মৃতি রানী দাস। বয়স ২০ বছর। এটি তাঁর প্রথম সন্তান। নরসিংদীর শিবপুরের ভরতের কান্দি এলাকায় তাঁর বাবার বাড়ি। শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মেড্ডা এলাকায়। বাবার নাম বিমল চন্দ্র দাস। স্বামী রিপন চন্দ্র দাস।

মাঠে সন্তান প্রসবের সময় স্মৃতি রানীর পাশে ছিলেন স্থানীয় নারী নাজমা আকতার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলে এসে আমাকে বলল, মা, একটা মেয়ে কাঁদছে। শুনে আমি এগিয়ে যাই। গিয়ে ঘটনা বুঝতে পারি। তারপর বাড়ি থেকে কাপড়, বিছানার চাদর নিয়ে সবাই মিলে তাঁকে ঘিরে আড়াল করে রাখি। তাঁকে আর হাসপাতালে যেতে হয়নি। এখানেই সন্তান প্রসব হয়েছে।’

স্মৃতি রানীর চাচাতো ভাই দুলাল চন্দ্র দাস গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বোন স্মৃতি রানীর প্রসববেদনা ওঠার পর পরিবারের লোকজন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তাঁকে নিয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন। ব্যথায় রীতিমতো কাতরাচ্ছিলেন স্মৃতি রানী। আরশীনগর রেলক্রসিংয়ে আসতেই দেখা গেল, ব্যাপক যানজট। ৩০ মিনিট যানজটে আটকে থেকে স্মৃতি রানীর অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। একপর্যায়ে সবাই মিলে রাস্তার পাশের মাঠে নিয়ে যান তাঁকে। আশপাশের নারীরা তাঁকে ঘিরে আড়াল করে দাঁড়ান। স্থানীয় নারীরাও এগিয়ে আসেন। এ রকম পরিস্থিতিতে সুস্থ কন্যাসন্তানের জন্ম দেন স্মৃতি। তিনি জানান, নবজাতকের নাম রাখা হয়েছে ছোঁয়া।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন জাহাঙ্গীর শেখ। তিনি বলেন, ‘এই পথ দিয়ে যাচ্ছিলাম। মহিলাদের জটলা দেখে এগিয়ে যাই। জানতে পারি, এক নারীর সন্তান হবে। স্থানীয় নারীদের সহযোগিতায় সুস্থ কন্যাসন্তানের জন্ম দেন ওই নারী।’

আরশীনগর রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান আমিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় ওই পথ দিয়ে সিলেট থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস। এ সময় ক্রসিংটি প্রায় ৩০ মিনিট বন্ধ রাখতে হয়। কারণ, অনেক যানজট লেগে গিয়েছিল।’

ঘটনার সময় রেলক্রসিংয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্য কাজী রফিকুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। তবে সে সময় দায়িত্ব পালনে ব্যস্ত ছিলাম।’