মেঘনা থেকে বালু তুলছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা

মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ছবি: এম. মনিরুল ইসলাম
মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ছবি: এম. মনিরুল ইসলাম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার কড়িকান্দি ফেরিঘাট এলাকার মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছেন বাহেরচর গ্রামের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের দুই নেতাসহ কয়েকজন ব্যক্তি।

উজানচর ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা এমরান মিয়া বলেন, ‘মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কথা শুনে ২২ অক্টোবর দুপুরে গিয়ে দেখি আবদুল করিম, মোস্তফা মিয়া, হারেছ মেম্বার ও বাতেন মেম্বার নদীতে একটি ড্রেজার বসিয়েছেন। বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি আছে কি না—এমন কথা বললে তাঁরা কোনো কাগজপত্র আমাকে দেখাতে পারেননি। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে আমি তাঁদের অনুরোধ করেছি এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে আমি ইউএনও স্যারকে ফোনে জানিয়েছি।’

এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল বাতেন, জেলা যুবলীগের সদস্য আবদুল করিম, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করা গোলাম মোস্তফাসহ কয়েকজন ২২ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে কড়িকান্দি ফেরিঘাট এলাকার মেঘনা নদীতে একটি ড্রেজার স্থাপন করেন। সেই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন তাঁরা।

আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘মেঘনা নদীর ফেরিঘাট এলাকায় (কড়িকান্দি) নদীতে চর জেগেছে, যার জন্য শুষ্ক মৌসুমে ফেরি ঠিকমতো চলাচল করতে পারে না। সে জন্য বিআইডব্লিউটিএর ইঞ্জিনিয়ার নদী কাটতে আমাদের একটি চিঠি দিয়েছেন। আর বাহেরচর গ্রামে একটি কলেজ হচ্ছে, সেখানে প্রায় সাত লাখ ঘনফুট বালু লাগবে, সে জন্য ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন হচ্ছে। এখান থেকে বালু উত্তোলন করে কলেজে বালু ভরাট, ড্রেজারের খরচ মেটানো, আমাদের কিছু লোকজন আছে যারা কাজ করবে, সেই বালু বিক্রি করে তা থেকে মেটানো হবে।’ অনুমোদনের কাগজ দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে পারেননি।

জেলা যুবলীগের সদস্য আবদুল করিম বলেন, ‘ভাই বিশ্বাস করেন, শুধু কলেজে বালু ভরাট করানোর জন্য মেঘনা নদী থেকে আমরা বালু উত্তোলন করছি। আমাদের অন্য কোনো উদ্দেশ্য নাই।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মানিকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেন, বাহেরচর গ্রামে প্রস্তাবিত কলেজের নাম করে স্বার্থান্বেষী একটি মহল মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। তারা কলেজের স্বার্থে বালু উত্তোলন করছে না বরং তারা নিজেদের স্বার্থে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছে। এতে আওয়ামী লীগের কেউ জড়িত নয়।

সম্প্রতি কড়িকান্দি ফেরিঘাটসংলগ্ন মেঘনা নদীতে গিয়ে দেখা যায়, ফেরিঘাটের পন্টুন থেকে প্রায় ৫০০ মিটার পশ্চিমে মেঘনা নদীতে একটি ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন কয়েকজন শ্রমিক। একটি বাল্কহেডে বালু ভরাটের পাশাপাশি সেখানে আরও পাঁচ-ছয়টি বাল্কহেডকে বালু নিতে অপেক্ষা করতে দেখা যায়। তিন-চার ঘণ্টায় অন্তত ২৫টি বাল্কহেডে করে প্রায় দেড় লাখ ঘনফুট বালু বিক্রি করেছে বলে জানিয়েছেন শ্রমিকেরা।

বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মেঘনা নদীতে কিছু লোক ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে বলে আমি শুনেছি, নায়েব বাধা দিয়েছে। সেই বাধা না মানলে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসক রেজওয়ানুর রহমান বলেন, মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে কেউ বালু উত্তোলন করলে প্রথমে উপজেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে, তারা কোনো পদক্ষেপ নিতে না পারলে জেলা থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।