টিন বিতরণের নামে কোটি টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা

বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য দেওয়া বরাদ্দের ১ কোটি টাকা ভুয়া তালিকা জমা দিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের অভিযোগ, ভুয়া মাস্টাররোল দেখিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের নেতারা ওই টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। অনেক স্থানে তালিকায় দেখানো ব্যক্তির অস্তিত্বই নেই।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব লুৎফুন নাহারের সই করা চিঠিতে দেখা যায়, অতিবর্ষণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক সাহায্য ও পুনর্বাসনের জন্য গত ১১ এপ্রিল উপজেলা পরিষদের অনুকূলে সাতটি ইউনিয়নে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। নগদ নয়, এ টাকা দিয়ে টিন কিনে বিতরণ করতে হবে।

উপজেলা প্রকৌশলী ফজল আহম্মেদ বলেন, সাতটি ইউপির চেয়ারম্যানকে ৪ লাখ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে ৪ লাখ এবং উপজেলা পর্যায়ের একাধিক নেতাকে ১৬ লাখ করে মোট ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। দলীয় পদ থাকায় বাটাজোর ও বার্থী ইউপির চেয়ারম্যানরা ৮ লাখ করে টাকা পান। ২২ জুন তাঁরা বিল তুলে নেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, বরাদ্দের অর্থ ব্যয়ে চরম অনিয়ম, দুর্নীতি ও বরাদ্দের শর্ত ভঙ্গ করা হয়েছে। বরাদ্দের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নেওয়ার পর ভুয়া মাস্টাররোল জমা দেওয়া হয়েছে।

বাটাজোর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আবদুর রব হাওলাদারের জমা দেওয়া মাস্টাররোলে দেখা যায়, দেওপাড়া গ্রামের এবরাহিম হাওলাদারকে দুই বান্ডিল টিন দেওয়া হয়েছে। তবে এলাকায় গিয়ে এ নামে কাউকে পাওয়া যায়নি। মাস্টাররোল অনুযায়ী দুই বান্ডিল টিন পেয়েছেন সিংগা গ্রামের শামীম সিকদার। তিনি বলেন, ‘আমি টিন পাই নাই।’

>প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য এই অর্থ বরাদ্দ হয়

এ বিষয়ে আবদুর রব হাওলাদার বলেন, অভিযোগের সত্যতা নেই। কিছু টিন স্কুল, কলেজ, মন্দির, মসজিদে দেওয়া হয়েছে।

সরিকল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আকন মেজবা উদ্দিনের জমা দেওয়া মাস্টাররোলে দেখা যায়, দলের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক কালাম মাতুব্বর, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি রতন ব্যাপারী, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন ও সদস্য কাওছার হোসেনকে দুই বান্ডিল করে টিন দেওয়া হয়েছে।

ওই চারজন বলেন, তাঁরা টিন পাননি এবং মাস্টাররোলে সইও করেননি। তবে আকন মেজবা উদ্দিন বলেন, ‘টিন বিতরণ করেছি।’