অস্ত্রের চালান আসে উলফার ট্রলারে!

এমভি খাজার দান এবং এফবি আমানত’ নামে এই দুটি ট্রলারেই ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের সিইউএফএল জেটিঘাটে অস্ত্রের চালান আসে। মামলার আলামত হিসেবে চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট এলাকায় রাখা হয়েছে ট্রলার দুটি। ছবিটি ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে তুলেছেন প্রথম আলোর আলোকচিত্রী সৌরভ দাশ
এমভি খাজার দান এবং এফবি আমানত’ নামে এই দুটি ট্রলারেই ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম বন্দরের সিইউএফএল জেটিঘাটে অস্ত্রের চালান আসে। মামলার আলামত হিসেবে চট্টগ্রাম নগরের সদরঘাট এলাকায় রাখা হয়েছে ট্রলার দুটি। ছবিটি ২৯ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে তুলেছেন প্রথম আলোর আলোকচিত্রী সৌরভ দাশ

বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি জাহাজ থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ খালাস করে তা চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানার (সিইউএফএল) জেটি পর্যন্ত নিয়ে আসার কাজ ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) সদস্যদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে করা হয়। এ জন্য ‘এমভি খাজার দান’ ও ‘এফবি আমানত’ নামে দুটি ট্রলার ব্যবহার করা হয়। এ দুটি ট্রলারের যে মালিকানা দেখানো হয়েছে বাস্তবে ওই নামের কোনো লোকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি প্রথম আলোর অনুসন্ধানে। ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার ও আটকের ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ ট্রলার দুটি বেনামে উলফারই।
২০০৯ সালে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্তও আটক এই ট্রলার দুটির মালিকানা কেউ দাবি করেনি। এমভি খাজার দান ও এফভি আমানত নামের দুটি ট্রলার সরকারি সংস্থা সমুদ্র বাণিজ্য অধিদপ্তরে (এমএমডি) নিবন্ধিত আছে। এই নিবন্ধিত ট্রলার দুটির সঙ্গে একই নামের আটক দুটি ট্রলারের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, কোন দেশে তৈরি এবং কত শক্তির—তার কোনো মিল নেই।
এ প্রসঙ্গে সরকারি সংস্থা সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে ওই সময় বলেছিলেন, অস্ত্র পরিবহনের সময় আটক এমভি খাজার দান ও এফভি আমানত এবং আমাদের দপ্তরে ওই দুই নামে যে দুটি নৌকা নিবন্ধন করা হয়েছে, তা এক নয়। স্বাভাবিকভাবে ধরে নেব, আটক ট্রলার দুটি অন্য কোনো মালিকের।

আটকের পর থেকে কার্গো বোট ও ট্রলারটি চট্টগ্রামের নগরের অভয় মিত্র ঘাট এলাকায় এসআরভি পুলিশ ফাঁড়ির জিম্মায় রাখা হয়। এ ফাঁড়ির দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ উপপরিদর্শক (টিএসআই) কাউছার ২০০৯ সালে ‘প্রথম আলো’র সঙ্গে আলাপকালে জানান, গত পাঁচ বছরেও কেউ বোট দুটির মালিকানা দাবি করতে আসেননি।

প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে এমভি খাজার দানের কথিত মালিক সোবহান দাবি করেছিলেন, ‘খাজার দান নামের আটক ট্রলারটি আমার নয়।’ তাহলে এ ট্রলার কার? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা ভালো করে খোঁজ নিয়ে দেখুন। গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকেও বলুন খোঁজ নিতে। তাহলে বুঝতে পারবেন বোটটি কার।’ অস্ত্র আটক মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় এক বছর জেল খাটার পর এখন তিনি জামিনে আছেন।

দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, উলফার মালিকানাধীন কয়েকটি ট্রলার বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশি জলসীমায় চলাচল করে। তবে কৌশলে এসব ট্রলারের মালিকানা রাখা হয়েছে স্থানীয় লোকজনের নামে। আটক ট্রলার দুটিও বেনামে উলফার মালিকানাধীন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

  • (অনুসন্ধানী এই প্রতিবেদনটি ২০০৯ সালের ৫ মার্চ ‘প্রথম আলো’য় প্রকাশিত হয়েছিল। পাঠকদের আগ্রহের কথা বিবেচনা করে কিছু পরিমার্জন করে প্রতিবেদনটি আবার প্রকাশ করা হলো)