এই কষ্টের শেষ কোথায়?

সড়কের গর্তে জমে আছে কাদাপানি। হেলেদুলে চলছে গাড়ি। চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এখন এমনই বেহাল। ছবিটি গতকাল দুপুরে শান্তিবাগ এলাকা থেকে তোলা l সৌরভ দাশ
সড়কের গর্তে জমে আছে কাদাপানি। হেলেদুলে চলছে গাড়ি। চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোড এখন এমনই বেহাল। ছবিটি গতকাল দুপুরে শান্তিবাগ এলাকা থেকে তোলা l সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে কষ্ট যেন শেষ হচ্ছে না। সাত মাস ধরে বেহাল সড়কটিতে চলাচলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে নগরবাসী। গত এপ্রিল থেকে জোয়ারজনিত ও বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় বেশ কয়েক দিন এই সড়ক ডুবেছিল। ওই সময় থেকে সড়কটি বেহাল হয়ে পড়ে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সড়কের বেপারিপাড়া এলাকায় দেখা যায়, চার লেনের সড়ক হয়ে গেছে দুই লেন। এই এলাকার প্রায় আধা কিলোমিটারজুড়ে দুপাশে বড় বড় গর্ত। এসব গর্তে জমে আছে পানি। এসব পানি পরিণত হয়েছে মশার প্রজননকেন্দ্রে। দুর্ঘটনার ঝুঁকি এড়াতে গর্তে পুঁতে দেওয়া হয়েছে গাছের ডাল। কোনো রকম হেলেদুলে ধীরগতিতে চলাচল করছে গাড়ি। এ ছাড়া বিভিন্ন অংশে কাদাও জমে আছে।

সড়কের পাশের উডি ফার্নিচার নামের একটি আসবাবপত্র বিক্রয়কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শফিউল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের দুরবস্থা ও জলাবদ্ধতার কারণে তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। আগে মাসে ৮-১০ লাখ টাকা বিক্রি হলেও এখন ২-৩ লাখ টাকার মালামাল বিক্রি হয় না। আবার পানিতে ডুবে দোকানের লাখ লাখ টাকা দামের মালামালও নষ্ট হয়েছে। দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির উৎপাতের কারণে দোকানে বসা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তাঁরা অতি দ্রুত এই সড়ক সংস্কার করে স্থানীয় বাসিন্দাদের নরক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ জানান সিটি করপোরেশনের প্রতি।

দুই দশমিক দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি তিন ফুট উঁচু এবং ছয় লেনে উন্নীত করা হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লেফটেন্যান্ট কর্নেল মহিউদ্দিন আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, জাইকার অর্থায়নে ৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়কটি সংস্কার করা হবে। দুই পাশেই ফুটপাত ও নালা থাকবে। শুষ্ক মৌসুমেই মূল কাজ সম্পন্ন হবে। তখন বর্তমানের দুর্ভোগ আর থাকবে না।

বেপারিপাড়ায় সড়ক যেন চষা জমি! কাদা মাড়িয়ে চলছে গাড়ি। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো
বেপারিপাড়ায় সড়ক যেন চষা জমি! কাদা মাড়িয়ে চলছে গাড়ি। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্র জানায়, সড়ক সংস্কারের জন্য দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে ওই প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে।

চট্টগ্রাম নগরের শেখ মুজিব সড়কের বাদামতলী মোড় থেকে শুরু হয়ে পোর্ট কানেকটিং (পিসি) রোডের ছোটপুল এলাকা পর্যন্ত সড়কটি ‘আগ্রাবাদ এক্সেস রোড’ নামে পরিচিত। চট্টগ্রামের ব্যস্ততম এই সড়ক দিয়ে আগ্রাবাদ থেকে হালিশহর, নয়াবাজার, সাগরিকা, অলংকার মোড়, এ কে খান গেট হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আসা-যাওয়া করা যায়।

ভাঙা সড়কের যন্ত্রণা ও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তির জন্য চলতি বছরের গত ২৬ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদের বিভিন্ন সামাজিক ও ব্যবসায়িক সংগঠন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা বেপারিপাড়া এলাকায় মানববন্ধন করেন। তাঁরা অতি দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানান।

গতকাল দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, শান্তিবাগ এলাকায় সড়কের দুপাশেই সড়কে ছোট-বড় গর্ত। কিছু গর্ত ইট দিয়ে কোনো রকম ভরাট করা হয়েছে। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে অনেক গাড়িচালক সড়কের আরেক প্রান্তের অন্য লেন ব্যবহার করছেন।

শান্তিবাগ এলাকায় একটি ফার্নিচার দোকানের নিরাপত্তারক্ষী মোহাম্মদ আমির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দোকানের সামনের গর্তে প্রায় সময় রিকশা উল্টে গিয়ে যাত্রীরা আহত হন।

শান্তিবাগ এলাকায় গর্তে জমে থাকা পানি পরিণত হয়েছে মশার প্রজননকেন্দ্রে। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো
শান্তিবাগ এলাকায় গর্তে জমে থাকা পানি পরিণত হয়েছে মশার প্রজননকেন্দ্রে। গতকাল দুপুরে তোলা ছবি l প্রথম আলো

ভাঙা সড়কের কারণে গাড়ির যন্ত্রাংশ দ্রুত নষ্ট হচ্ছে বলে জানান বাসচালক আফতাব উদ্দিন। তিনি বলেন, এই সড়কে গাড়ি চালানো খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। গাড়ি উল্টে কখন দুর্ঘটনা ঘটে এই চিন্তায় থাকেন তাঁরা।

আগ্রাবাদের এই সড়কের দুপাশে ফার্নিচার, মুদির দোকান, ইলেকট্রনিকসামগ্রীসহ বিভিন্ন ধরনের প্রায় পাঁচ শ দোকান রয়েছে। এই সড়কের দুই পাশে প্রায় ৬০টি ফার্নিচারের দোকান ও শোরুম রয়েছে। আসবাবের জন্য এগুলোর ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে নগরবাসীর কাছে। কিন্তু বেহাল সড়কের কারণে বিক্রি কমে গেছে।

শান্তিবাগ এলাকার শৈল্পিক ফার্নিচার শোরুমের বিক্রয় নির্বাহী রণবীর প্রথম আলোকে বলেন, সড়কের বাজে অবস্থার কারণে আগের মতো ক্রেতা আসেন না। এখন দোকানের পণ্যসামগ্রী বিক্রি করে নিজেদের বেতন নেওয়াই কঠিন হয়ে পড়েছে।