প্রধান বিচারপতির ফেরার তথ্য নেই

সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। প্রথম আলাে ফাইল ছবি
সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। প্রথম আলাে ফাইল ছবি

সরকারের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার ছুটির মেয়াদ আজই শেষ হচ্ছে। তবে তিনি তাঁর ছুটির মেয়াদ বাড়িয়েছেন কি না, সে বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কিছু জানা যায়নি। অবশ্য সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পদত্যাগ বা অপসারণ ছাড়া ২০১৮ সালের ৩১ জানুয়ারি তাঁর স্বাভাবিক অবসর গ্রহণ পর্যন্ত তিনিই বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি থাকছেন। সংবিধান অনুযায়ী, প্রধান বিচারপতি কখনো ‘অনুপস্থিত’ থাকতে পারেন।
১৩ নভেম্বর প্রধান বিচারপতির দেশে ফেরাসংক্রান্ত গণমাধ্যমের জল্পনা-কল্পনার বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করা হলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘উনি ফিরলে ফিরবেন।’ প্রধান বিচারপতির ছুটির মেয়াদ বাড়ানো প্রশ্নে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কিছু জানি না। এ বিষয়ে এখনো কিছু জানানো হয়নি।’ আলাদাভাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও একই মন্তব্য করেন।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও বিশেষ কর্মকর্তা সাইফুর রহমান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন প্রধান বিচারপতির তরফে ছুটির মেয়াদ বাড়ানো, তাঁর দেশে ফেরা বা কাজে যোগদান বিষয়ে নতুন কোনো চিঠি পায়নি।
ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা গত ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। এর আগে গত ২ অক্টোবর এক মাস ছুটির কথা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবরে চিঠি পাঠান প্রধান বিচারপতি, যার মেয়াদ ছিল ১ নভেম্বর পর্যন্ত। ছুটিতে থাকা অবস্থায় প্রধান বিচারপতির ১৩ অক্টোবর বা কাছাকাছি সময়ে বিদেশে যাওয়ার এবং ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বিদেশে থাকার ইচ্ছা পোষণের বিষয়ে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করতে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। গত ১০ অক্টোবর বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে পাঠানো ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে আইন মন্ত্রণালয় ১২ অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে।

রিভিউয়ের খসড়ার কাজ হয়েছে ২৫ শতাংশ
ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে রিভিউয়ের খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে বলে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘এ তথ্য কে কোথায় পেল, আমি জানি না। এক মাস যাবৎ সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করছি। বলতে পারেন, ড্রাফটিংয়ের (খসড়ার) কাজই এখন ২৫ শতাংশ হয়েছে। চূড়ান্ত করার বিষয় তো পরে আসবে।’

‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’
গতকাল নিজ কার্যালয়ে ব্রিফিংয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট বলতে, বিশেষ করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বলতে বিভাগের সব কজন বিচারপতিকে নিয়ে সমষ্টিগতভাবে বোঝায়। শুধু প্রধান বিচারপতি অর্থ সুপ্রিম কোর্ট নয়। অন্য বিচারপতিরা যখন তাঁর সঙ্গে বসে বিচারকাজ পরিচালনা করতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছেন, তখন স্পষ্টভাবে গণমাধ্যমে বলেছি, তাঁর (প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার) এজলাসে বসে বিচারকার্য পরিচালনা করা সুদূরপরাহত। কাজেই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটি স্পষ্ট অন্য বিচারপতিরা যদি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বসতে না চান, তাহলে এককভাবে বসে বিচারকার্য করা অসম্ভব। এ বিষয়টি নিয়ে আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদক যাঁরা একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতা তাঁরা যে বক্তব্য দিচ্ছেন, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এটি নিয়ে তাঁরা রাজনীতি করতে চাচ্ছেন।’
অপর প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, যেকোনো একজন বিচারপতির জন্য বিচারকাজ ঠেকে থাকে না। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ একদম ঠিকমতো চলছে, ঠিকমতো বসছে, মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে ও মামলা নিষ্পত্তির গতিও কমেনি। কাজেই জনগণের কোনো রকম চিন্তা করার কারণ নেই।
প্রধান বিচারপতি এজলাসে বসলে আদালত অবমাননা হবে অ্যাটর্নি জেনারেল বক্তব্য দিয়েছেন, যা আদালত অবমাননাকর বলে সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীনের বক্তব্যের বিষয়ে মাহবুবে আলম বলেন, এটি একটি বিশেষ খবরের কাগজ উদ্দেশ্যমূলকভাবে দিয়েছে।