শুনেও নীরব ছিলেন খালেদা জিয়া

চট্টগ্রামে ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের কথা শুনেও নীরব ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক সাদিক হাসান রুমী তাঁকে অস্ত্র আটকের তথ্য জানিয়েছিলেন।
১০ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলার রায় ঘোষণার সময় চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক এস এম মজিবুর রহমান রায়ের পর্যবেক্ষণে এ কথা বলেন।
বিচারক বলেন, এ অস্ত্র ও চোরাচালানের মামলা দুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখানে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই) ও জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা পরিদপ্তরের (এনএসআই) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। এসব কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় তাঁদের জবানবন্দিতে এবং যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাঁরা একে অন্যকে জড়িয়ে যেসব তথ্য দিয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্ট যে তাঁদের সঙ্গে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) যোগাযোগ ছিল। তাঁরা এটা স্বীকারও করেছেন। এনএসআইয়ের তখনকার মহাপরিচালক (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম) তাঁদের সহায়তায় সস্ত্রীক দুবাইয়ে বেড়াতে গিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছেন।
এনএসআইয়ের উপপরিচালক মেজর লিয়াকত স্বীকার করেন, উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া ও অনুপ চেটিয়ার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। তিনি এ বিষয়ে জবানবন্দিও দিয়েছিলেন। অস্ত্র আটকের সময় মেজর লিয়াকত নিজেকে আবুল হোসেন পরিচয় দিয়ে বাধা দিয়েছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন।
রায়ে বলা হয়, ডিজিএফআইয়ের তৎকালীন মহাপরিচালক সাদিক হাসান রুমী সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন, তিনি তখনকার প্রধানমন্ত্রীকে ঘটনাটি জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নীরবতা দেখিয়েছিলেন। এ ঘটনাও মামলায় এসেছে।
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের কথা উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এ ঘটনা নিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলেন। কমিটিতে পাঁচজন সদস্য ছিলেন, যাঁদের তিনজনই এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তা মেজর জেনারেল ইমামুজ্জামানও সাক্ষ্য দিয়েছেন।
পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়, ওই সময় শিল্পমন্ত্রী ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী। শিল্পসচিব ছিলেন শোয়েব আহমেদ। তিনি সাক্ষ্য দিতে এসে বলেছিলেন, বিসিআইসি শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনের একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। তাই সিএফইউএল বিসিআইসির অধীন হওয়ার কারণে এর দায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের। ওই সময় বিসিআইসির চেয়ারম্যান ছিলেন ইমামুজ্জামান। শোয়েব আহমেদ তাঁর সাক্ষ্যে বলেছিলেন, অস্ত্র আটকের ঘটনা তিনি নিজামীকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো পদক্ষেপ না নিতে বলেছিলেন। এ ঘটনা সরকারের সবাই অবহিত আছেন বলেও তিনি (নিজামী) তাঁকে জানিয়েছিলেন।
পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর ঘটনার পর চট্টগ্রামে এসে অস্ত্র পরিদর্শন করেছেন, বৈঠক করেছেন, তদন্ত কমিটি করেছেন। এসব বিষয় এ মামলায় এসেছে। রায়ে বলা হয়, লুৎফুজ্জামান বাবর ও মতিউর রহমান নিজামী আদালতে বারবার বলেছিলেন, তাঁদের রাজনৈতিক কারণে হয়রানি করার জন্য এ মামলায় জড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিকে তাঁদের ব্যাপারে সাক্ষ্য দিতে দেখা যায়নি। যাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁরা তাঁদের অধীন ছিলেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সাক্ষীদের জবানবন্দির ভিত্তিতে এ মামলায় হাওয়া ভবনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিমের জন্য উইং কমান্ডার (অব.) সাহাবউদ্দিনের মাধ্যমে টাকা দেয় দুবাইয়ের এআরওয়াই গ্রুপ। এ গ্রুপের আবদুর রাজ্জাক ইউসুফের সঙ্গে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের যোগাযোগ ছিল।