ফটিকছড়ির 'যুবনেতা'র এত দাপট!

এমাজ উদ্দিন
এমাজ উদ্দিন

সকালে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে নামার পরই কিছু যুবকের বাধার মুখে পড়েন পরিবহনশ্রমিকেরা। তাঁদের বলা হয়, অবরোধ চলছে। বাস, ট্রাক, অটোরিকশা কিছুই চলবে না। এরপর রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় টায়ার জ্বালিয়ে চালক, যাত্রী, সাধারণ মানুষসহ স্থানীয় প্রশাসনকে ওই যুবকেরা বুঝিয়ে দেন কতটা কঠোরভাবে পালন করা হবে এই অবরোধ। চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে গতকাল শুক্রবার সকালে হঠাৎ শুরু হওয়া এই অবরোধের কারণ জানতেই স্থানীয় বাসিন্দাদের দু-তিন ঘণ্টা পার হয়ে যায়।
এই উপজেলার ওপর দিয়ে যাওয়া চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কে ততক্ষণে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সকাল নয়টার দিকে অবরোধের কারণ জানতে পারে মানুষ। ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদের’ ফটিকছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদককে আটকের প্রতিবাদে ছয় ঘণ্টার অবরোধ চলছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, অবরোধ পালনে সক্রিয় ভূমিকায় রয়েছে ফটিকছড়ি উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের একটি পক্ষ।
যাঁকে কেন্দ্র করে এই অবরোধ, সেই ‘নেতার’ নাম মো. এমাজ উদ্দিন (৩২) ওরফে জেম। গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় তাঁকে ফটিকছড়ি পৌরসভার বিবিরহাটবাজার এলাকা থেকে আটক করে পুলিশ। এর প্রতিবাদে গতকাল সকাল ছয়টায় রাস্তায় নামেন তাঁর সমর্থকেরা। আর দুর্ভোগে পড়ে যানবাহনের যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ।
অবশ্য যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশীদ গতকাল রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, যুবলীগ ছাড়া আওয়ামী লীগের আর কোনো যুব সংগঠন নেই। বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদ নামে যে সংগঠনের কথা বলা হচ্ছে সেটি একটি ভুয়া সংগঠন।
পুলিশ জানায়, ‘যুবনেতা’ এমাজউদ্দিনের বিরুদ্ধে বন আইনে একটি মামলা রয়েছে। তবে তাঁকে ওই মামলায় ধরা হয়নি। সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় তাঁকে আটক করা হয়। গতকাল দুপুরে তাঁকে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বিবিরহাটবাজারে এমাজের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে তিনটি বুলেট পাওয়ার কথা জানায় পুলিশ।
গতকাল সকালে এমাজের পক্ষে রাস্তায় নামা যুবলীগ-ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকেরা ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী পক্ষ ‘আওয়ামী পরিবারের’ অনুসারী। তিনি নিজেও আওয়ামী পরিবারের সমর্থক। অবরোধকারীরা গতকাল সকালে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের নাজিরহাট ঝংকার মোড় থেকে উপজেলা সদরের বিবিরহাট বাসস্টেশন, নাজিরহাট মেডিকেল রাস্তা, বারৈয়াহাট, বিবিরহাটসহ বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুঁড়ি ফেলে বিক্ষোভ করেন। সড়কের বিভিন্ন স্থানে আটকা পড়ে যানবাহন। এমনকি উপজেলার অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সড়কেও অবরোধ করা হয়। বিভিন্ন স্থানে এমাজের মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায়। পুলিশ বেশ কয়েকবার অবরোধকারীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে কাজ হয়নি। অতিরিক্ত পুলিশ আসার পর দুপুর ১২টার দিকে সড়ক থেকে অবরোধকারীরা ধীরে ধীরে সরে যান।

ফটিকছড়ি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মুজিবুর রহমান বলেন, এমাজ যুবলীগের কেউ নন। তাঁর পক্ষে যাঁরা মাঠে নেমেছেন, তাঁরাও যুবলীগের কেউ নন। তাঁরা সবাই ‘আওয়ামী পরিবারের’ সদস্য। উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহেদুল আলমও একই কথা বলেন।

তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান বলেন, ‘এমাজউদ্দিন এলাকায় অনেক সাংগঠনিক কাজ করছেন। তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি পক্ষ পুলিশের সহযোগিতায় তাঁকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছে।’

এ বিষয়ে ফটিকছড়ি থানার ওসি মো. জাকির হোসেন বলেন, এমাজের ঘরে তিন রাউন্ড বুলেট পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করছেন তাঁরা।

মানুষের দুর্ভোগ

হঠাৎ সড়ক অবরোধের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ে দূরপাল্লার বাসের যাত্রীরা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় তাদের।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের পেলাগাজি এলাকায় কথা হয় যাত্রী দীপংকর চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, চার ঘণ্টা ধরে তাঁদের বাস যেতে দিচ্ছেন না কিছু যুবক।

আরেকটি বাসের যাত্রী নিলুফার ইয়াছমিন বলেন, ‘কী জন্য অবরোধ, কেউ জানে না।’