বাসক চাষে আয় বারো মাস

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পানেয়া গ্রামের নারীরা রাস্তায় লাগানো বাসকগাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করছেন। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পানেয়া গ্রামের নারীরা রাস্তায় লাগানো বাসকগাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করছেন। ছবিটি সম্প্রতি তোলা l প্রথম আলো

রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার পানেয়া গ্রামের নিরুবালা, সুভা রানী, হামিদা খাতুন, মিলি বেগমকে এখন না খেয়ে থাকতে হয় না। শুনতে হয় না স্বামীর গালমন্দও। কারণ, এখন সংসারে অর্থ জোগান দিচ্ছেন তাঁরা। তাঁদের মতো পাঁচগাছি ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামের ৫০০ নারী পতিত জায়গায়, সড়কের ধারে ঔষধি গাছ বাসকের চাষ করে বাড়তি আয় করছেন। তাঁদের চাষ করা ঔষধি গাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান।

উপজেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে পানেয়া গ্রাম। গ্রামটিতে যাওয়ার পথে রাস্তার দুই ধারে ঔষধি গাছের বাগান চোখে পড়ে। কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ২০১১ সালে ওই গ্রামের ১০ জন নারী রাস্তার ধারে বাসকের চাষ শুরু করেন। তাঁরা এক কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে, বাড়ির আনাচে-কানাচে ও পতিত জায়গায় বাসকের চারা রোপণ করেন। এক বছর পর প্রথম পাতা সংগ্রহ শুরু হয়। এখন প্রতি কেজি শুকনো বাসক পাতা ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

পানেয়া গ্রামের সুলতানা খাতুন বলেন, ‘মোর স্বামী দিনমজুর। অন্যের জমিত কাজ করি কোনোমতে সংসার চালায়। গত বছর মুই ছয়টা মুরগি বিক্রি করি রাস্তার ধারোত, বাড়ির পাশোত ২৬০টা বাসকের গাছ লাগাছুন। এক বছরে বাসক পাতা ও চারা বেচে ৯ হাজার টাকা কামাই করছুন। ওই টাকা দিয়া মুই তিনটা ছাগল কিনছুন।’

চার বছর আগে বাড়ির পাশের পতিত জমিতে আবাদ করা ঔষধি গাছের পাতা বিক্রির অর্থ দিয়ে সুলতান মিয়া ও তাঁর স্ত্রী মরিয়ম খাতুন ৭০টি মুরগি কিনে খামার করে এখন বেশ ভালোভাবে সংসার চালাচ্ছেন। মরিয়ম বলেন, তিন মাস পরপর বাসকের কাঁচা পাতা সংগ্রহ ও গাছ পরিষ্কার করতে হয়। এরপর দু-তিন ঘণ্টা বিরতি দিয়ে ছায়াযুক্ত স্থানে পাতা শুকাতে দিতে হয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক গাছ থেকে তিন মাস পরপর চার কেজি কাঁচা পাতা পাওয়া যায়, যা শুকিয়ে হয় এক কেজি। প্রতি কেজি বাসক পাতা ৪২ টাকা দরে বিক্রি হয়।

 স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানেয়া ছাড়াও জাহাঙ্গীরাবাদ, পাইতান, এনায়েতপুর, শাহ্পুর, কেশবপুর, নাসিরাবাদ, শাদুল্লাহপুর, শাহেদপুর, দশ ময়জাসহ অন্তত ১৫টি গ্রামে বাসকের চাষ হচ্ছে।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হাফিজার রহমান বলেন, ‘এখানকার মাটি এসব ঔষধি গাছ চাষের উপযোগী। আমাদের তত্ত্বাবধানে পীরগঞ্জের ৩০ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে নারী-পুরুষেরা এসব ঔষধি গাছের চাষ করছেন। এসব গাছ চাষ করতে সার, কীটনাশক লাগে না। গরু-ছাগলও খায় না। পাঁচ ফুট পরপর বর্ষা মৌসুমে এসব গাছ রোপণ করলে ভালো হয়।’

বাসক পাতার গুণাগুণ সম্পর্কে ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড ইমাজিং সেন্টার ঢাকার হারবাল শাখার কনসালট্যান্ট ফিদা হাসান লোহানী বলেন, বাসকের পাতা দিয়ে দেশের নামকরা ওষুধ কোম্পানিগুলো কাশির সিরাপ তৈরি করছে। বাসকের পাতায় এমন কিছু ক্ষারীয় পদার্থ আছে, যার ফলে সেখানে ছত্রাক জন্মায় না এবং পোকামাকড় ধরে না বলে ফল বাক্সবন্দী করতে ও সংরক্ষণ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। বাসকের পাতায় কিছুটা দুর্গন্ধ থাকায় পশুরা তা খায় না।