সড়ক আর নদ যেন ভাগাড়

যশোর শহরের রেল সড়কের ইসলাম চেম্বার ভবন এলাকা। সেখানে রেল সড়কের ওপরেই অনেকটা জায়গাজুড়ে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। পৌরসভার ভ্যানে করে বর্জ্য এনে সেখানে ফেলা হচ্ছে। ময়লার কারণে শহরের অত্যন্ত ব্যস্ততম সড়ক কিছুটা সংকীর্ণ হয়ে গেছে।

ময়লার স্তূপের গা ঘেঁষে মোটরসাইকেলের একটি শোরুম। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম অতিষ্ঠ হয়ে দোকান গুটিয়ে চলে যাবেন কি না, সেই চিন্তায় আছেন। তিন মাস আগে তিনি যশোর পৌরসভার মেয়রকে ডেকে এনে পরিস্থিতি দেখান। মেয়রকে তিনি বলেন, ‘একই জায়গা পৌরসভার ময়লার স্তূপ আর আমার প্রতিষ্ঠান। দুটোর যেকোনো একটি থাকা উচিত। আপনি বলেন, কোনটা থাকা উচিত?’ তখন মেয়র সমস্যা সমাধানে তিন মাসের সময় নেন। কিন্তু আজও সমাধান আসেনি।

যশোর শহরের পাড়া-মহল্লার বাসাবাড়ি ও প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। ফলে এভাবেই শহরের ব্যস্ত বিভিন্ন সড়কের বাঁকে বাঁকে ময়লা ফেলে রাখা হয়। একইভাবে শহরের ভেতর দিয়ে যাওয়া ভৈরব নদে প্রকাশ্যে ময়লা ফেলা হচ্ছে।

পৌরসভার বর্জ্যবাহী ভ্যানে করে পাড়া-মহল্লার ময়লা-আবর্জনা শহরের রেল সড়কের ইসলাম চেম্বার ভবনের সামনে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়কে জিলা স্কুলের ২ নম্বর ফটকের পাশে, ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়ের পেছনে গুরুদাস বাবু লেন, হরিনাথ দত্ত লেনসহ বিভিন্ন সড়কের পাশে নিয়ে স্তূপ করে রাখা হয়।

শহরের অন্যতম ব্যস্ততম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সড়ক দিয়ে বেনাপোল স্থলবন্দরে যেতে হয়। এ সড়কে যশোর জিলা স্কুল অবস্থিত। স্কুলের ২ নম্বর ফটকের পাশে রাস্তার ওপরেই বর্জ্য ফেলার আরেকটি স্থান। স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা দুর্গন্ধে ওই ফটক দিয়ে যাতায়াতকরতে পারেন না। স্কুলের পাশে চা-দোকানি চঞ্চল বণিক বলেন, ‘রোদ বাড়লে দুর্গন্ধ বাড়ে। বৃষ্টিতে ময়লা ছড়িয়ে পড়ে। এতে এলাকার পরিবেশ ঠিক থাকছে না।’

সড়কের ওপরে স্তূপ করে রাখা ময়লা আবার বহন করা হয় পৌরসভার খোলা ট্রাকে করে। সারা দিনই এভাবে ওই বর্জ্য শহরের বাইরে ঝুমঝুমপুর এলাকার সরকারি ময়লাখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সব মিলিয়ে ময়লা নিয়ে শহরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চেপে রাস্তায় চলাচল করতে হয়। শহরের পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে।

এদিকে যশোর শহরের ভেতর দিয়ে ভৈরব নদ প্রবাহিত হয়েছে। নদের দুই ধারে শহরের প্রধান প্রধান বাজারের অবস্থান। এর মধ্যে রয়েছে ফলের বাজার, বইয়ের দোকান, মাংসের বাজার, মাটির তৈজসপত্রের বাজার, কাঁচাবাজার। এমনকি শহরের বড়বাজারও এ নদের পাশে অবস্থিত। তবে এসব বাজারে বর্জ্য ফেলার কোনো ডাস্টবিন নেই। ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ময়লা-আবর্জনা প্রকাশ্যে নদের মধ্যে ফেলা হয়। গত শনিবার দুপুরে কাঠেরপুল সেতুর পাশে দাঁড়িয়ে দেখা গেছে, মুরগি ও মাংসের পচা অস্থি-মজ্জা-রক্ত এ সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে বালতি থেকে নদের পানিতে ফেলা হচ্ছে। দড়াটানা সেতুর পাশে অন্তত ১০টি হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের বিষাক্ত বর্জ্য ও শৌচাগারের মল নদের পানিতে সরাসরি ফেলা হচ্ছে।

নদের পাশে দুজন ব্যবসায়ী বলেন, বাজারের কোথাও পৌরসভার ডাস্টবিন নেই। যে কারণে জায়গা না পেয়ে নদের ভেতরেই ময়লা ফেলা হয়। নির্দিষ্ট জায়গা থাকলে তাঁরা নদে ময়লা ফেলতেন না।

যশোর পৌরসভার মেয়র জহিরুল ইসলাম চাকলাদার বলেন, রাস্তার পাশে যাঁদের বাড়ির সামনে পৌরসভার ডাস্টবিন বানানো ছিল, তাঁরা লিখিত আবেদন করে সেগুলো অপসারণ করিয়েছেন। ফলে শহরে কোথাও এখন আর পৌরসভার ডাস্টবিন নেই। তবে এ সমস্যার সমাধানে শহরতলির ঝুমঝুমপুরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ শেষ হবে। তখন শহরের কোথাও আর ময়লা-আবর্জনা থাকবে না।