রাজধানীতে সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলা হবে: প্রধানমন্ত্রী

অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বই হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি
অমর একুশে গ্রন্থমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বই হাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: পিআইডি

বাংলা একাডেমি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, রমনা বটমূল, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও শিল্পকলা একাডেমী এলাকা নিয়ে রাজধানীতে একটি সাংস্কৃতিক বলয় গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৪’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব পরিকল্পনার কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের প্রতিটি দেশের রাজধানীতে একটি সাংস্কৃতিক বলয় থাকে। সেখানে সাংস্কৃতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বাংলা একাডেমি থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য একটি সুন্দর (ওভারব্রিজ) উড়ালসেতু অথবা আন্ডারপাস করে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। প্রধানমন্ত্রী সাংস্কৃতিক বলয়ের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পরে তাঁর সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে রমনা বটমূল পর্যন্ত উড়ালসেতু করে দিয়েছে। তিনি বলেন, আবার রমনা পার্ক থেকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট ও শিল্পকলা একাডেমী পর্যন্ত আরেকটি আন্ডারপাস করে দেওয়া যায়। তাহলে পুরো এলাকার মধ্যে একটা সংযোগ হবে। এ ধরনের একটা পরিকল্পনা সরকারের আছে বলে তিনি জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আবারও সরকার গঠন করতে পেরেছি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যখন শুরু হয়েছে, ইনশাআল্লাহ সম্পন্ন করতে পারব।’ তিনি বলেন, যে জাতি ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে সে জাতি আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। এ জন্য সবার সহযোগিতা চান তিনি। এ সময় তিনি একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পেছনে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগ ও অবদানের কথা তুলে ধরেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বইমেলা প্রেরণার উত্সব। আমরা সারা বছর বসে থাকি, কখন গ্রন্থমেলা শুরু হবে। অনেক দিন ধরেই চিন্তা ছিল কীভাবে মেলার স্থান সম্প্রসারিত করা যায়। গ্রন্থমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত সম্প্রসারণ প্রতিটি বাংলার মানুষের জন্য গর্বের বিষয় বলে তিনি উল্লেখ করেন। কারণ, এই সম্প্রসারণ এমন জায়গায় হয়েছে, যেখানে ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঘোষণা দিয়েছিলেন “এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম”।’
প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকার লেখক-প্রকাশকের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সচেতন রয়েছে। তিনি বাংলার শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্মগুলো অন্য ভাষায় অনুবাদ করে সারা বিশ্বের ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। বক্তব্য শেষে গ্রন্থমেলার বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী ও অতিথিরা।
এর আগে সভাপতির বক্তব্যে বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্রন্থমেলার আয়োজন নিয়ে কথা উঠেছে।’ অনেকে বলেছেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিলেন কেন?’ আর আগে অনেকে বলেছেন, ‘সরিয়ে নেন না কেন?’ অভিজ্ঞতা বলবে, ‘ঠিক হয়েছে কি না। তবে আমি মনে করি ঠিক হয়েছে।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, গ্রন্থমেলার মধ্যে দিয়ে সাংস্কৃতিক বিকাশ ঘটে। মন্ত্রী মেলার পরিসর বাড়ার কথা তুলে ধরে বলেন, এটি ছিল দীর্ঘদিনের দাবি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে মেলার পরিসর বাড়িয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
দর্শক সারিতে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম প্রমুখ।

বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেলেন ১১ জন: বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এবার বাংলা একাডেমির পুরস্কার পেয়েছেন ১১ জন। তাঁরা হলেন—কবিতায় হেলাল হাফিজ, কথাসাহিত্যে পূরবী বসু, প্রবন্ধে মফিদুল হক, গবেষণায় যুগ্মভাবে জামিল চোধুরী ও প্রভাংশু ত্রিপুরা, অনুবাদ সাহিত্যে কায়সার হক, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সাহিত্যে হারুন হাবীব, স্মৃতিকথা ও ভ্রমণকাহিনি মাহফুজুর রহমান, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও পরিবেশ সাহিত্যে শহীদুল ইসলাম এবং শিশুসাহিত্যে যুগ্মভাবে কাইজার চৌধুরী ও আসলাম সানি। এ বছর বাংলা একাডেমির ফেলো হিসেবে বিশেষ সম্মাননাপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয় প্রখ্যাত মূকাভিনয় শিল্পী পার্থ প্রতিম মজুমদারকে।