ডিআইটি পুকুর সাত ভূতের আস্তানা

গেন্ডারিয়ায় ডিআইটি পুকুর। চারপাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে দোকানপাট। সংস্কার হলে এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন করতে পারে এই পুকুর l প্রথম আলো
গেন্ডারিয়ায় ডিআইটি পুকুর। চারপাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে দোকানপাট। সংস্কার হলে এলাকার সৌন্দর্যবর্ধন করতে পারে এই পুকুর l প্রথম আলো

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডে মাঠ, ব্যায়ামাগার, পার্ক কিছুই নেই। এক যুগের বেশি সময় ধরে একটি কমিউনিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ বন্ধ। পাঠাগারটিও প্রায় পরিত্যক্ত। ঘনবসতিপূর্ণ পুরান ঢাকার এই ওয়ার্ডে খোলা জায়গা বলতে আছে ডিআইটি পুকুর। কিন্তু পুকুরটি প্রায় মৃত। কচুরিপানা, ময়লা-আবর্জনা আর ভরাটের কারণে এর অবস্থা করুণ।
দেড় একরের এই পুকুরের মালিক রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর চারপাশে রাস্তা আছে। স্থানীয় লোকজনের ভাষায়, এটি এখন সাত ভূতে খায়। কেবল সংস্কার করলেই পুকুরটি হতে পারে এলাকাবাসীর নিশ্বাস ফেলার জায়গা।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই এলাকায় শিশু-কিশোর বা বয়স্কদের জন্য বিনোদন, খেলাধুলা এমনকি হাঁটাচলার কোনো জায়গা নেই। পুকুরটি সংস্কার করে তার পাড়ে হাঁটাচলার ব্যবস্থা করা যেতে পারে সহজেই। পুকুরে শিশু-কিশোরেরা সাঁতার শিখতে পারবে। এতে এলাকার সৌন্দর্যও বাড়বে।

গেন্ডারিয়াসহ শহীদনগর, লালমোহন পোদ্দার লেন, হরিচরণ রায় রোড, বাহাদুরপুর লেন, গেন্ডারিয়ার অতীশ সরকার রোড, গ্লাস ফ্যাক্টরি রোড, ডিআইটি প্লট রোড, নবীন চন্দ্র গোস্বামী রোড, ফরিদাবাদ লেন, বাংলাদেশ ব্যাংক কলোনি, ঢালকানগর লেন এলাকা নিয়ে ডিএসসিসির ৪৭ নম্বর ওয়ার্ড গঠিত। ৫৭৬ বর্গকিলোমিটার আয়তনের ওয়ার্ডের জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ২৫ হাজার।

এ ওয়ার্ডে পাঁচ বছর ধরে তীব্র গ্যাস-সংকট চলছে। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। গতকাল বুধবার এই এলাকাগুলোর স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিরা এসব তথ্য জানান।

ডিআইটি পুকুর: ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ডিআইটি পুকুরটি দখলমুক্ত ও সংস্কার করতে স্থানীয় বাসিন্দাদের পক্ষে মো. জুবায়ের রাজউকের কাছে আবেদন করেছিলেন। এর ছয় দিন পর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে রাজউকের তখনকার চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেছিলেন, পুকুরটি সংস্কারে প্রায় এক কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রায় দুই বছর হতে চলল, পুকুর আর সংস্কার হয়নি। ইতিমধ্যে রাজউকের চেয়ারম্যানও বদল হয়ে গেছে।
রাজউকের বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুর রহমান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার জানামতে রাউজকের এ ধরনের কোনো প্রকল্প নেই। তবে ওই এলাকায় এত বড় পুকুর যদি থাকে, তাহলে আমরা তা সংস্কার করব।’

গতকাল গিয়ে দেখা গেছে, পুকুরটির চারপাশ ভরাট করে প্রায় ২৫টি দোকানঘর বসানো হয়েছে। পুকুরের পশ্চিম ঘাটে ময়লা-আবর্জনা স্তূপ হয়ে আছে। উত্তর পাড়ে প্রায় পাঁচ শতাংশ জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে রিকশা গ্যারেজ। এই গ্যারেজ এলাকায়ই দোকানপাটের সংখ্যা বেশি। পুকুরের ভরাট অংশে শাকসবজির চাষ করেছেন আশপাশের বাড়ির মালিকেরা। তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বেড়াও দেওয়া হয়েছে। পুকুরের বাকি অংশ কচুরিপানায় ভরা।

ডিআইটি প্লট রোডের বাসিন্দা মাসুদুর রহমান বলেন, ১০ বছর আগেও মহল্লার মানুষ এই পুকুরে গোসল করত। রান্নাবান্নায় এই পুকুরের পানি ব্যবহারের স্মৃতিও বেশি পুরোনো নয়। এখন অবশ্য পানি নষ্ট হয়ে গেছে।

গ্যাস-সংকট: পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে এই ওয়ার্ডে গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বাসিন্দারা। এর মধ্যে ডিআইটি প্লট রোড, ঢালকানগর লেন, শহীদনগর এলাকায় তীব্রতা বেশি। এসব এলাকায় দিনের বেশির ভাগ সময় গ্যাস থাকে না।

ডিআইটি প্লট লেনের বাসিন্দা মোতাহার হোসেন বলেন, প্রতিদিন সকাল ছয়টার দিকে গ্যাস চলে যায়। বিকেল চারটার দিকে অল্প অল্প গ্যাস আসে। কিছুক্ষণ থেকে আবার তা চলে যায়। রাত ১০টার পর আবার গ্যাস আসে। এতে রান্নাবান্না করতে সমস্যা হয়। শীতকালে এই তীব্রতা আরও বাড়বে। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
জলাবদ্ধতা: সামান্য বৃষ্টিতেই ঢালকানগর লেন, ডিআইটি প্লট রোড, শহীদনগরসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ঢালকানগর লেনের বাসিন্দা দিদারুল ইসলাম বলেন, টানা ২০ মিনিটের বৃষ্টিতেই এই এলাকার রাস্তাগুলোতে পানি জমে যায়। এই পানি নামতে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। গত বর্ষায় মহল্লার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এলাকার বৃষ্টির পানি অপসারণের নালাগুলো সংস্কার করা না হলে আগামী বর্ষায় দুর্ভোগ আরও বাড়বে।

কমিউনিটি সেন্টার: গতকাল বাহাদুরপুর লেনে গিয়ে অর্ধনির্মিত এই কমিউনিটি সেন্টার দেখা গেছে। এক যুগের বেশি সময় ধরে এর নির্মাণকাজ বন্ধ আছে। বাহাদুরপুর লেন খুব সংকীর্ণ। একটি ব্যক্তিগত গাড়িই ঠিকমতো ঢুকতে পারে না।

বাহাদুরপুর লেনের বাসিন্দা জামাল উদ্দিন বলেন, ডিএসসিসির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের সময় এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছিল। একতলা ছাদ ঢালাই দেওয়ার পর নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে এভাবেই পড়ে আছে।

পুকুরটি সংস্কারের আহ্বান জানাই

নাসির আহম্মদ ভূঁইয়া
নাসির আহম্মদ ভূঁইয়া

ডিএসসিসির ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাসির আহম্মদ ভূঁইয়া। তাঁর ওয়ার্ডের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে গতকাল প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
প্রথম আলো: ডিআইটি পুকুর সংস্কারে গত দুই বছরে আপনি কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?
কাউন্সিলর: পুকুরটি রাজউকের। তাদেরই এটা সংস্কার করতে হবে। চার পাড়ের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে। পুকুরটি সংস্কার হলে আমার ওয়ার্ডের সৌন্দর্য বাড়বে। তাই আমি পুকুরটি দ্রুত সংস্কারের আহ্বান জানাই।
প্রথম আলো: এলাকায় গ্যাস-সংকট প্রকট। বাসিন্দাদের এই কষ্ট কি আপনাকে ছোঁয় না?
কাউন্সিলর: গ্যাস-সংকট আমার ওয়ার্ডের দীর্ঘদিনের সমস্যা। আমার বাসায়ও গ্যাস থাকে না। অনেক কষ্ট পেতে হচ্ছে। বিষয়টি তিতাসকে জানানো হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।
প্রথম আলো: জলাবদ্ধতা দূর করতে কী করেছেন?
কাউন্সিলর: ডিএসসিসিতে আবেদন করেছি। আগামী বর্ষার আগে যাতে সমাধান করা হয়, সে তাগাদা দিচ্ছি।
প্রথম আলো: বাহাদুরপুর লেনের কমিউনিটি সেন্টারটির পুনর্নির্মাণকাজ শুরুর কোনো উদ্যোগ নিয়েছেন?
কাউন্সিলর: কী কারণে কমিউনিটি সেন্টারের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়েছে, তা জানা নেই। তবে তা পুনর্নির্মাণ বা বিকল্প স্থানে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য মেয়র সাঈদ খোকন বরাবর আবেদন করেছি। তবে সাড়া পাচ্ছি না।