ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টা, ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেপ্তার ৬

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের চেষ্টার অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজনসহ ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনজনের মধ্যে দুজনই ছাত্রলীগের নেতা, একজন কেন্দ্রীয় কমিটির। বাকি তিনজনের একজন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের, দুজন স্নাতক পর্যায়ের কলেজছাত্র।

গতকাল শনিবার সকাল সাতটার দিকে নগরের বাংলাবাজার এলাকার নাহার ম্যানশনের নিচতলার একটি বাসা থেকে ছয়জনকে আটক করা হয়। দুপুরে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা হয়।

আটক হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী হলেন মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আলমগীর হোসেন শাহিন, গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মাহমুদুল হাসান আবিদ ও ভূ-তত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মারুফ হোসাইন মারুফ। তাঁদের মধ্যে আলমগীর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ও মাহমুদুল অমর একুশে হল শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি।

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক মহিউদ্দীন এবং অমর একুশে হলের নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তার করেছিল সিআইডি। মহিউদ্দীন ও মামুনের কাছ থেকে জব্দ করা মুঠোফোনের হোয়াটসঅ্যাপে বিভিন্ন ব্যক্তির আইডিতে প্রশ্নপত্র পাঠানোর ছবি, প্রবেশপত্র ও রোল নম্বর পাওয়া যায়। পরে মহিউদ্দীন ও মামুন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁদের জবানবন্দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী নাভিদ আনজুমসহ দ্বিতীয় বর্ষের আরও সাতজন শিক্ষার্থীকে গত সোমবার আটক করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছয়জন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে সিআইডি।

গতকাল বরিশাল মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ দাবি করেছে, আটক ছাত্রলীগের
কেন্দ্রীয় নেতা আলমগীর হোসেন শাহিনও এসব প্রশ্ন ফাঁস ও ডিভাইসের মাধ্যমে জালিয়াতির অন্যতম হোতা।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বরিশাল থেকে তিনজন শিক্ষার্থীকে আটকের বিষয়টি আমি অবগত হয়েছি। এ ধরনের ঘটনায় দেশের প্রচলিত আইনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে। তাদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়েছে। পরবর্তী সময়ে তথ্য-প্রমাণ পেলে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী ছাড়া আটক বাকিরা হলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র মুয়ীদুর রহমান বাকী, রাজধানীর মোহাম্মদপুর ডিগ্রি কলেজের বিবিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাকিব আকন ও গলাচিপা ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাব্বির আহম্মেদ প্রিতম।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যে বাসা থেকে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে, মুয়ীদুর রহমান বাকী সেটি ভাড়া নিয়েছিলেন। পুলিশের অভিযানে তাঁদের কাছ থেকে পাঁচটি অ্যান্টি জ্যামার ইলেকট্রনিক ডিভাইস, পাঁচটি ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক ব্লুটুথ ইনডাকশন (ইয়ারফোন), ১১টি মুঠোফোন, অতিরিক্ত দুটি সিম কার্ড, একটি হেডফোন ও তিনটি পেনড্রাইভ জব্দ করা হয়।

পুলিশ কমিশনার এস এম রুহুল আমিন বলেন, আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে তিনজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী যোগাযোগ করেছিলেন। তাঁদের প্রত্যেকের কাছে এক লাখ টাকা চাওয়া হয়। তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করলে ভর্তি-ইচ্ছুক পরীক্ষার্থীরা এই চক্রের দেওয়া অ্যান্টি জ্যামার ইলেকট্রনিকস ডিভাইস শরীরে বেঁধে ছোট ইয়ারফোন কানে লাগিয়ে পরীক্ষা দিতে যেতে পারতেন। এই ডিভাইস দিয়ে মুঠোফোনের মতোই কথা বলা যায়। প্রশ্নপত্র ফাঁস করে বাইরে থেকে চক্রের সদস্যরা পরীক্ষার্থীদের উত্তর বলে দিতেন। এর আগেই তাঁদের আটক করা হয়।

পুলিশ কমিশনার বলেন, আটক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। একই সঙ্গে তাঁদের চক্রে আর কেউ জড়িত কি না, তা তদন্ত করে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।