২৫০ কোটি টাকার প্রকল্পে ধীরগতি

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের সাপমারা খালের মুখে ৭০০ মিটার এলাকায় সিসি ব্লক বসানোর কাজ চলছে। বাঁধের জন্য ব্লক বানাচ্ছেন শ্রমিকেরা। ছবিটি গত শুক্রবার সকালে তোলা l প্রথম আলো
চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের সাপমারা খালের মুখে ৭০০ মিটার এলাকায় সিসি ব্লক বসানোর কাজ চলছে। বাঁধের জন্য ব্লক বানাচ্ছেন শ্রমিকেরা। ছবিটি গত শুক্রবার সকালে তোলা l প্রথম আলো

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় আড়াই শ কোটি টাকার উপকূল রক্ষার কাজ চলছে ঢিমেতালে। পরিকল্পনা অনুযায়ী উপকূলীয় বাঁধ রক্ষায় কিছু স্থানে সিমেন্ট ও কংক্রিটের ব্লক (সিসি ব্লক) বসানো, কোথাও জিও ব্যাগ স্থাপন আবার কোথাও মাটি ভরাটের কথা রয়েছে। তবে বেশির ভাগ এলাকায় কাজের অগ্রগতি এখনো দৃশ্যমান নয়।  ইতিমধ্যে কয়েকটি প্রকল্পের কার্যাদেশের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আগামী বর্ষার আগে কাজ শেষ করা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট জাতীয় অর্থনৈতিক নির্বাহী পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় আনোয়ারা ও পতেঙ্গা উপকূল রক্ষায় জন্য ২৮০ কোটি টাকা অনুমোদন হয়। তার মধ্যে আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার জন্য ২৫০ কোটি আর পতেঙ্গার জন্য ৩০ কোটি টাকার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়। ইতিমধ্যে আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারে ৩১টি দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এতে খরচ ধরা হয়েছে সর্বমোট ২০৫ কোটি টাকা। বাকিগুলোর দরপত্রের প্রক্রিয়া চলছে। 

প্রকল্পের আওতায় আনোয়ারায় ১ হাজার ৫৪০ মিটার, কর্ণফুলী থানার শিকলবাহায় ৮০০ মিটার ও কৈয়গ্রামের পেশকারহাট এলাকায় ৪০০ মিটার প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। শিকলবাহা, চানখালি, মুরালি, কেয়াগড়, বাকখাইন, চাতরী ও বারখাইনে খালের সংযোগ মুখে নির্মাণ করা হবে নয়টি স্লুইসগেট। এ ছাড়া সাপমারা খাল ও ভরা শঙ্খ খাল খনন করার পাশাপাশি প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে। উপজেলার রায়পুর ও জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের ৯ কিলোমিটারের বেশি এলাকায় বেড়িবাঁধে সিসি ব্লক বসানো হবে।

একাধিক ঠিকাদার ও পাউবো কর্মকর্তারা জানান, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু, মোরা আর টানা বর্ষণের কারণে সময়মতো কাজে হাত দিতে পারেননি ঠিকাদারেরা। তবে, এখন সব কটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। দরপত্র হওয়া ৩১টি প্রকল্পের মধ্যে ১২টি প্রকল্পে সিসি ব্লক, মাটি ভরাট আর জিও ব্যাগ স্থাপন করা হবে। ওই ১২টির মধ্যে ইতিমধ্যে ৪টি প্রকল্পের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর ঠিকাদার কাজ শুরু করেছেন।

আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বার আউলিয়া এলাকায় এখনো বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করেননি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ছবিটি গত শুক্রবার বিকেলে তোলা l প্রথম আলো
আনোয়ারা উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের বার আউলিয়া এলাকায় এখনো বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করেননি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। ছবিটি গত শুক্রবার বিকেলে তোলা l প্রথম আলো

গত শুক্রবার সকালে উপজেলার জুঁইদণ্ডী ইউনিয়নের সাপমারা খালের মুখ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ভাঙনকবলিত এলাকায় শ্রমিকেরা ব্লক তৈরির কাজ করছেন। সেখানে ৭০০ মিটার এলাকায় মাটির কাজের পাশাপাশি ব্লক বসানো হবে। ২ কোটি ২৬ লাখ টাকার ওই কাজ পেয়েছে তাহের ব্রাদার্স নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আগামী বছরের ৫ আগস্ট কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও সবেমাত্র কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদার। তাহের ব্রাদার্সের ওই কাজ প্রকল্প এলাকায় তদারককারী সেলিম আহমদ এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলতে পারেননি।

রায়পুর ইউনিয়নের বাইন্যা দিঘি এলাকায় গেলে কর্মরত শ্রমিকেরা জানান, বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে দুই দিন আগে। মেসার্স মশিউর রহমান নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজের দায়িত্ব পেয়েছে। ঠিকাদারের প্রতিনিধি মো. ইব্রাহিম বলেন, বাইন্যা দিঘি উপকূলের ৭১০ মিটারে মাটি, জিও ব্যাগ ও ব্লক বসানোর কাজ হচ্ছে। এই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। তবে কাজটি বুঝিয়ে দেওয়ার সময় পার হয়েছে গত ৪ নভেম্বর।

এ ব্যাপারে রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জানে আলম বলেন, আনোয়ারা উপকূল রক্ষার কাজের গতি খুবই ধীর। এ কারণে আগামী বর্ষার আগে কাজ শেষ হবে কিনা সন্দেহ জাগছে।

নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে না পারা প্রসঙ্গে মেসার্স মশিউর রহমানের প্রতিনিধি নুর উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে কার্যাদেশ পাওয়ার আগেই মেয়াদ পার হয়ে যায়। এ কারণে সময় বাড়ানোর আবেদন করব। আশা করি আগামী জুনের আগে কাজ শেষ করতে পারব।’

জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী কাইছার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার জন্য বরাদ্দকৃত আড়াই শ কোটি টাকার মধ্যে ইতিমধ্যে দুই শ পাঁচ কোটি টাকার ৩১টি প্রকল্পে দরপত্র হয়েছে। আরও ১২টি প্রকল্পের দরপত্র হবে। সব কটি প্রকল্পের কাজ শুরু করেছেন ঠিকাদারেরা।