স্কুলের পাশে করাতকল

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কিশামত হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা করছে শিক্ষার্থীরা। (ইনসেটে) পাশেই টিনের বেড়ার ভেতরে চলে করাতকল। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কিশামত হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে খেলাধুলা করছে শিক্ষার্থীরা। (ইনসেটে) পাশেই টিনের বেড়ার ভেতরে চলে করাতকল। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার উত্তর কিশামত হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে করাতকল। করাতকলের শব্দে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। কাঠের গুঁড়া উড়ে পড়ছে চোখে। দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বিদ্যালয়টি ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি সরকারীকরণ হয় ২০১৩ সালে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৬৯, শিক্ষক পাঁচজন। দুই বছর আগে বিদ্যালয় ঘেঁষে একটি করাতকল গড়ে ওঠে। এটির মালিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি খান মোহাম্মদ আলী।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল এবং জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের ক্ষতি করে এর ২০০ মিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। উপজেলা পর্যায়ে এর তদারক করবেন সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তবে এসব নিয়ম অমান্য করেই উপজেলার ধোপাডাঙ্গা ইউনিয়নে উত্তর কিশামত হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘেঁষে করাতকল চলছে।

বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ ঘেঁষে উত্তর পাশে করাতকল। কিছু অংশ ঢেউটিন দিয়ে ঘেরা। গতকাল রোববার সকাল ১০টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কাঠ কাটা হচ্ছে। পাশের মাঠে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করছে। মাঠে ও বিদ্যালয়ের বারান্দায় কাঠের গুঁড়া পড়ে থাকতে দেখা যায়।

কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, করাতকলে কাঠ কাটার সময় গুঁড়া উড়ে এসে চোখে পড়ে। যন্ত্রের শব্দে ক্লাসে ঠিকমতো কথা শোনা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, করাতকলে কাঠ চেরানোর সময় বিকট শব্দে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে। বাতাসে কাঠের গুঁড়া উড়ে আসে। পোশাকও নোংরা হচ্ছে। শ্রেণিকক্ষ সব সময় ময়লা-আবর্জনায় ভরে থাকে।

পার্শ্ববর্তী ধোপাডাঙ্গা গ্রামের ব্যবসায়ী সামছুল হক বলেন, করাতকলের পাশে টিনের বেড়া দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই বেড়া কোনো কাজেই আসছে না। শুধু তা-ই নয়, বিদ্যালয়ের প্রবেশপথের দুপাশে গরুর খামার রয়েছে। ফলে মলমূত্র ডিঙিয়ে চলাচল করতে হয়। এসব কারণে বিদ্যালয়ে উপস্থিতি কমে যাচ্ছে।

এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে প্রধান শিক্ষক ওবায়দুর রহমান বলেন, ক্লাস চলাকালে করাতকল বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে এসব কারণে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতির ওপর প্রভাব পড়েনি।

খান মোহাম্মদ আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘শুক্রবার করাতকলটি চালানো হয়। আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে। আমি বিদ্যালয়ের জমিদাতা। এর আশপাশে আমারই জমি। করাতকলটি আমার ছেলে চালায়। কাঠের গুঁড়া যাতে না যায়, সে জন্য টিনের বেড়া দিয়েছি। তারপরও করাতকল ও গরুর খামারটি সরিয়ে নেব।’ করাতকলের অনুমোদন প্রসঙ্গে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ সম্পর্কে ইউএনও গোলাম কিবরিয়া মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ওই করাতকলের অনুমোদন আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে।