বন্ধ বিদ্যালয় চালুর দাবি

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও মিলনহাটি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন l ছবি: প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও মিলনহাটি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত ভবন l ছবি: প্রথম আলো

২৫ ফুট প্রস্থ ও ৮৫ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি আধা পাকা ভবন। এতে আছে চারটি কক্ষ। একটি কক্ষের চালের টিন এবং দুটি দরজা ও তিনটি জানালা আছে। বাকি তিনটি কক্ষের চালের টিন, আটটি জানালা ও দরজা নেই। নেই কোনো আসবাবপত্র।

এই চিত্র ১০ বছর আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও মিলনহাটি কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এ ব্যাপারে কিছুই জানে না উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়। তবে পুনরায় বিদ্যালয়টি চালু করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই গ্রামের শিশুদের দেড়-দুই কিলোমিটার দূরের বিদ্যালয়ে গিয়ে ক্লাস করতে কষ্ট হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ আবুল খায়ের গত ২৫ মে বলেছিলেন, ‘এখানে এমন একটি বিদ্যালয় যে ছিল, সে ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। তবে দু-এক দিনের মধ্যে বিদ্যালয়টি পরিদর্শনে যাব এবং এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেব।’ এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘আমি ওই বিদ্যালয় সম্পর্কে এখনো কোনো খোঁজ-খবর নিতে পারিনি। ডিসেম্বর মাসে খোঁজ-খবর নেব।’

উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে ইসরাত বলেন, ‘খোঁজ-খবর নিয়ে বিদ্যালয়টি চালুর ব্যবস্থা নেব।’

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরাইল উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের মিলনহাটি, ভাটেরা ও জয়নগর গ্রামের শিশুদের জন্য সরকার খাদ্যের বিনিময়ে শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরে প্রায় ৬ লাখ ৯৪ হাজার টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে। স্থানীয় ব্যক্তিদের দান করা ৩৩ শতাংশ জমিতে বিদ্যালয়টি হয়। বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে এখানে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল চার শতাধিক। শিক্ষক ছিলেন চারজন। শুরুতেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন চৌরাগুদা গ্রামের বাসিন্দা আমীর হামজা।

আমীর হামজা বলেন, ‘শুরুর দিকে সরকার শিক্ষকদের ৫০০ টাকা করে সম্মানী দিতেন। আর ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে মাসে ৩০ কেজি করে গম দিতেন। কয়েক বছর পর শিক্ষার্থীদের গম দেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া শিক্ষকদের সম্মানী পেতেও নানা সমস্যা হতো। এ জন্য ২০০০ সালে এই চাকরি ছেড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ দেই।’

বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক অভিযোগ করেন, ২০০৪ সালের বন্যায় বিদ্যালয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে সংস্কার করা হয়নি। প্রশাসনের অবহেলায় ২০০৭ সালে বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে গেছে।

গত সোমবার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের চারটি কক্ষের মধ্যে একটি তালাবদ্ধ। ভাঙা জানালা দিয়ে দেখা গেছে ভেতরে তেমন কিছু নেই। অপর তিনটি কক্ষের দরজা-জানালা নেই। এর মধ্যে দুটি কক্ষের ভেতরের গর্তে পানি জমে আছে।

মিলনহাটি গ্রামের বাসিন্দা ও বিদ্যালয়ের ভূমিদাতাদের একজন তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘গ্রামে স্কুল ছিল না, তাই আমরা অনেক মূল্যবান জমি দিয়ে এখানে স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। প্রশাসনের সহায়তার অভাবে ২০০৪ সালের বন্যার পর এটি ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা তিন গ্রামের মানুষ স্কুলটি আবার চালু দেখতে চাই।’

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র বাদল মিয়া (২০) বলেন, ‘২০০৭ সালে আমি এই স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়তাম। হঠাৎ একদিন স্কুলডা বন্ধ হইয়া গেল। এরফর কিছুদিন পাশের গ্রামে স্কুলে গেছিলাম, কিন্তু বেশি দিন যাইতে ফারি নাই।’