৫৫ কিলোমিটার সড়ক বেহাল

বরগুনা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার ভাঙাচোরা সড়ক। সম্প্রতি কেজি স্কুল সড়ক থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো
বরগুনা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকার ভাঙাচোরা সড়ক। সম্প্রতি কেজি স্কুল সড়ক থেকে তোলা ছবি l প্রথম আলো

বরগুনা পৌর শহরের কেজি স্কুল বাজার থেকে দক্ষিণে ক্রোক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক। এই অংশের অবস্থা এতটাই বেহাল যে যানবাহন তো দূরের কথা, লোকজন যাতায়াত করতেও দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এভাবে পৌর শহরের অধিকাংশ সড়কই বেহাল হয়ে আছে দীর্ঘদিন। 

পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানান, কয়েক বছর ধরে ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো সংস্কার করা হয় না। ফলে এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে তাঁদের ভোগান্তির শেষ নেই। যত দ্রুত সম্ভব এই ভাঙাচোরা সড়ক সংস্কারের দাবি করেন তাঁরা।
পৌরসভা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকায় প্রায় ৬০ হাজার ৮৭৫ জন মানুষের বাস। পৌর শহরে ১৭২ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৫ কিলোমিটার সড়কে চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এখন এসব সড়ক চলাচলের উপযোগী নেই। বাকি ১১৭ কিলোমিটার সড়ক নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া এসব ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক সংস্কার করতে ৭-৮ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রয়োজন।
সরেজমিনে দেখা যায়, কেজি স্কুল সড়ক, চরকলোনি বিআরটিসি সড়ক, স্টাফ কোয়ার্টার, পিটিআই সড়ক, কলেজ রোড, সুলতান শাখা আলী সড়ক, বালিকা বিদ্যালয় সড়ক, আসমত আলী শিকদার সড়ক, টাউন হল চত্বর, আবদুর রব সেরনিয়াবাত (সদর রোড) সড়ক, কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সড়ক, ব্যাংক কলোনি সড়ক, পিটিআই সড়ক, নাথপট্টি লেক সড়ক, কলেজ রোডসহ শহরের অধিকাংশ সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে।
কেজি স্কুল বাজার থেকে দক্ষিণ দিকের সড়কটির পিচ ঢালাই উঠে গিয়ে ইটের খোয়া বের হয়ে আছে এবং সড়কটির অধিকাংশ জায়গায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। শহরের কলেজিয়েট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সড়কটির সিমেন্টের ঢালাই ভেঙে গেছে।
একই অবস্থা চরকলোনি এলাকার চরকলোনি বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড সড়কটির। এই সড়কেও মানুষ হেঁটে চলা ছাড়া কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। এলাকার কয়েকজন ব্যক্তি বলেন, এ সড়কে বেহাল দশার কারণে তাঁরা হেঁটে যাতায়াত করেন। এই সড়কে সিমেন্টের ঢালাই ভেঙে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
চরকলোনি এলাকার বাসিন্দা মো. শাওন বলেন, পৌর শহরে উন্নয়ন করে উন্নতি করা হয়, কিন্তু রাস্তাঘাটের উন্নতি হয় না। এই রাস্তায় রিকশাও চলে না।
কেজি স্কুল এলাকার অটোরিকশাচালক মো. মাহতাব বলেন, ‘এই সড়কে পিচ উঠে গিয়ে মাটি বের হয়ে গেছে। এখন আর গাড়ি চালাতেও মন চায় না, কিন্তু বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে গাড়ি চালাতে হয়।’
কলেজ রোড সড়কের লিট চাইল্ড স্কুল এলাকা থেকে কলেজ ব্রাঞ্চ পর্যন্ত সড়ক ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা। এ ছাড়া কলেজ ব্রাঞ্চ সড়কে নালা নির্মাণ হওয়ায় প্রায় এক বছর ধরে সড়কটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। ফলে যানবাহন ও পথচারী চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কলেজ রোড এলাকার একজন বাসিন্দা বলেন, পৌর নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা বলতে কিছুই নেই। আছে শুধু করের বোঝা। তা ছাড়া একটি নালা নির্মাণ করাতেই নাগরিকদের ভোগান্তির শেষ নেই। এ ছাড়া পিটিআই সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে এবং খাল খননের কারণে সড়ক ধসে পড়েছে।
মেরামতের জন্য বরাদ্দ থাকলেও উপজেলা পরিষদের সীমানাপ্রাচীরের জন্য দিঘির দক্ষিণ পাড়ের সড়কটি মেরামত করতে পারেনি পৌরসভা।
এ ছাড়া সদর রোডের পৌর সুপার মার্কেট থেকে পৌরসভার শেষ সীমানা সোনাখালী এলাকা পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কে অসংখ্য খানাখন্দ ও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ সড়কটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের অধীনে রয়েছে।
বরগুনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জসীম উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘অতিবর্ষার কারণে বিভিন্ন সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব সড়ক সংস্কারের কাজ শুরু করব এবং কিছু সড়কের কার্যাদেশ ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর কাজ শুরু হয়নি। আশা করছি অল্প সময়ের মধ্যে সড়কগুলোর সংস্কারকাজ শুরু হবে। তবে নালা নির্মাণের কাজ চলছে।’