৯৭ রোহিঙ্গার এইচআইভি শনাক্ত

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত ২৫ আগস্ট থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে এইচআইভি ভাইরাস আক্রান্ত ৯৭ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ শনাক্ত হয়েছে। একই সময়ে কক্সবাজারের স্থানীয় দুই বাসিন্দার শরীরেও এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। 
রোহিঙ্গা-ঢল শুরু হওয়ার এক মাস পর ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয়জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়। এর এক মাস পর ৩০ অক্টোবরে সংখ্যাটি দাঁড়ায় ৫৯ জনে। এর মধ্যে ১২ অক্টোবর পর্যন্ত ১৯ জন রোহিঙ্গা এইডস রোগী পাওয়া যায়। তাঁদের মধ্যে ১১ জন নারী ও ৮ জন পুরুষ। 
সব মিলিয়ে নতুন আসা এবং ২৫ আগস্টের আগে থেকে টেকনাফ ও উখিয়ার বিভিন্ন শিবিরে অবস্থান করা রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৩৮ জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী শনাক্ত হলো। এ অবস্থায় দেশে এইডসের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তি ধীরে ধীরে মরণব্যাধি এইডসের দিকে ঝুঁকতে থাকেন।
রোহিঙ্গারা শারীরিক নানা সমস্যার চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ছে। উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইচআইভি আক্রান্ত রোগী আরও থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা। 
এইচআইভি এইডস রোগীদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা চিকিৎসক এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ এইডস রোগীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু এখন রোহিঙ্গাদের কারণে তা নতুন করে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যে হারে এইচআইভি আক্রান্ত রোহিঙ্গা রোগী পাওয়া যাচ্ছে, তা উদ্বেগজনক। তাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সরকারিভাবে চিকিৎসা দেওয়া উচিত। এই ভাইরাস যাতে ছড়াতে না পারে, সে পদক্ষেপ নিতে হবে।
বাংলাদেশ ডার্মাটোলজি সোসাইটির সভাপতি এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অরক্ষিত যৌনাচার রয়েছে। জনগোষ্ঠী হিসেবেও তারা অনেক পিছিয়ে পড়া। সচেতনতার অভাব, সঠিক স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়াসহ নানা কারণে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি।

কক্সবাজার সদর হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত ২৫ আগস্টের পর এই হাসপাতালে নতুন করে শনাক্ত হওয়া এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত ৯৯ জনের (রোহিঙ্গা ৯৭ জন) মধ্যে পুরুষ ৪৩ ও নারী ৫৬ জন। এর মধ্যে ১৫ জনের বয়স ১৮-এর নিচে। বাংলাদেশি দুজন পুরুষ। তাঁরা প্রবাস ফেরত।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ও এইচআইভি রোগের পরামর্শক মো. শাহীন আবদুর রহমান চৌধুরী বলেন, এইচআইভি আক্রান্ত ৯৭ রোহিঙ্গা অন্য রোগের চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক নারী মারা গেছেন। 
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ২০১৫ সাল থেকে এইচআইভি এইডস আক্রান্তদের সেবা চালু হয়। এর আগে এখানকার বাঙালি ও রোহিঙ্গা রোগীরা চট্টগ্রামের দুটি বেসরকারি সংস্থা আশার আলো সোসাইটি এবং হোপ কেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে চিকিৎসা নিত। 
আশার আলো সোসাইটির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমন্বয়ক হাফিজ আহমেদ বলেন, ২৫ আগস্টের আগেই ৪১ পুরোনো রোহিঙ্গা এইচআইভির চিকিৎসা নিয়েছে। এখন এইচআইভি আক্রান্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩৮ জন। 
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ²বিভিন্ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোহিঙ্গাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এইচআইভি রোগী হিসেবে কাউকে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। এইচআইভি ভাইরাস শনাক্ত করার জন্য উখিয়া ও টেকনাফের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোহিঙ্গাদের দুটি কেন্দ্র খোলা হয়েছে বলে জানা গেছে। 
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় সহযোগিতা করা আশার আলো সোসাইটির এইচআইভি কাউন্সিলর প্রভাস পাল বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে একই পরিবারে চার-পাঁচজন এইচআইভি আক্রান্তের নজিরও পাওয়া গেছে।
কক্সবাজার জেলা সিভিল সার্জন শেখ আবদুস সালাম বলেন, ‘সরকারিভাবে কক্সবাজার সদর হাসপাতালেই এইচআইভি চিকিৎসা দেওয়া হয়। কারণ, অ্যান্টিবায়োটিক সরকারিভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। তাই বেসরকারি পর্যায়ে শনাক্ত হওয়া রোগীদের আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’