আ.লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী মিসবাহর প্রচারণা শুরু

মিসবাহউদ্দিন সিরাজ
মিসবাহউদ্দিন সিরাজ

আগামী জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহউদ্দিন সিরাজ। গত ২২ মার্চ সিলেট বিভাগীয় তৃণমূলের প্রতিনিধি সম্মেলনে বর্তমান সাংসদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতেই তিনি দলীয় মনোনয়নের দাবি জানিয়েছিলেন। প্রায় আট মাস পর এবার দলীয় ফোরামের বাইরে প্রার্থিতার প্রচারণা শুরু করলেন তিনি।

গত বুধবার বিকেলে সিলেটে আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মিসবাহউদ্দিন আগামী জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে প্রার্থিতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘আমি কৃষকের সন্তান। সেখান থেকে তিলে তিলে গড়ে উঠেছি। বার কাউন্সিলে সর্বোচ্চ ফোরামে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছি। সিলেটবাসীর জন্য কাজ করেছি। প্রধানমন্ত্রী যদি সুযোগ দেন, তবে জনপ্রতিনিধি হয়ে সিলেটবাসীর জন্য কাজ করে যেতে চাই। একজন সংসদ সদস্য হয়ে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী পালন করতে চাই।’

এর আগে গত ২২ মার্চ সিলেটে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলনে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সিলেট-১ আসনের সাংসদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উপস্থিতিতে প্রথম প্রার্থিতার বিষয়টি প্রকাশ করেছিলেন মিসবাহ। সেখানে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জীবনেও জনপ্রতিনিধি হতে পারিনি। যেহেতু আমাদের সুযোগ্য অর্থমন্ত্রীর বয়স হয়েছে, তিনি অবসর নেবেন। আজ যখন সুযোগ এসেছে, আমি আপনাদের সহায়তা পেলে দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হওয়ার আবেদন জানাতে চাই।’

এরপর থেকে মিসবাহ প্রার্থিতা নিয়ে শুধু দলীয় সভার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন। গত বুধবার দলীয় ফোরামের বাইরে প্রার্থিতা নিয়ে আবার সরব হওয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের আলোচনা শুরু হয়েছে। আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে সংবর্ধনায় আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা ছাড়াও জেলা ও নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা মঞ্চে ছিলেন। তাঁরা এক সুরেই মিসবাহকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী এবং পরবর্তী সময়ে তাঁকে সংসদে দেখতে চান—এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন।

সিলেট জেলা পরিষদ মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি লুৎফুর রহমান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় সদস্য ও নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দিন আহমদ কামরান। জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ শফিকুর রহমান চৌধুরী ও নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদউদ্দিন আহমদ বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে কামরান বলেন, ‘মিসবাহউদ্দিন সিরাজকে সংসদে পাঠানো এখন সময়ের দাবি। ছাত্র রাজনীতি থেকে বর্তমান অবস্থানে উঠে এসেছেন তিনি। মানুষ তাঁকে সংসদে দেখতে চায়। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কান্ডারি তিনি। আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়ে দেশের জন্য কাজ করার সুযোগ দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমারও জোর দাবি।’

১৯৭৭ সালে ছাত্রলীগের মাধ্যমে মিসবাহউদ্দিনের রাজনীতির হাতেখড়ি। জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদের মাধ্যমে মূল দলের নেতৃত্বে আসেন তিনি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সময় একনাগাড়ে সাত বছর জেল খাটেন। ২০০২ সালে সিলেট মহানগর প্রতিষ্ঠার পর দুই মেয়াদে ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০০৪ সালে সিলেটের গুলশান সেন্টারে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) জঙ্গি হামলায় তিনি আহত হয়েছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে টানা তিন মেয়াদে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আছেন।

আবুল মাল আবদুল মুহিত বিভিন্ন সময়ে বলেছেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে তিনি আর প্রার্থী হচ্ছেন না। প্রায় দুই বছর ধরে সিলেটে অর্থমন্ত্রীর উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় অংশ নিতে দেখা গেছে তাঁর ছোট ভাই জাতিসংঘে সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেনকে। আগামী নির্বাচনে মুহিত প্রার্থী না হলে মোমেন প্রার্থী হচ্ছেন—এ রকম প্রচারণাও আছে সিলেটে। তবে তৃণমূলের প্রতিনিধি সম্মেলনে মিসবাহউদ্দিনের প্রার্থিতা ঘোষণার পর অর্থমন্ত্রী ভবিষ্যতে প্রার্থী হচ্ছেন না—এমন কথা আর শোনা যায়নি।

দলীয় মনোনয়ন অর্থমন্ত্রীকে দেওয়া হলে প্রার্থী হবেন কি না, এমন প্রশ্নে মিসবাহউদ্দিন গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মনোনয়নপ্রত্যাশী। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যাব না। আমার কথা হচ্ছে, প্রার্থিতার ক্ষেত্রে তৃণমূলের চাওয়ার বাস্তবায়ন হোক। নেতা-কর্মীরা জাতীয় নির্বাচনে আমাকে প্রার্থী দেখতে চান। আমি তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই।’