যে কাজগুলো করা হলো না

>ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সদ্য প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক ২০১৫ সালের ৬ মে শপথ নিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে লন্ডনের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থান মারা যান তিনি। মাত্র ২ বছর ৬ মাস ২৫ দিন দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন এই মেয়র। আজকের আয়োজনে তাঁর করা উল্লেখযোগ্য কাজ এবং অসমাপ্ত স্বপ্নের কথা তুলে ধরা হলো
আনিসুল হক
আনিসুল হক

নির্বাচনী ইশতেহারে এবং দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন সময় নিজের স্বপ্নের কথা বলেছিলেন সদ্য প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক। দ্রুততার সঙ্গে বেশ কিছু কাজও তিনি করেছেন। কিছু কাজে হাত দিয়েছেন। মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদে কিছু কাজ করার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। অসমাপ্ত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সেই কাজগুলো করা গেলে তাঁর স্বপ্নের পরিচ্ছন্ন, সবুজ, আলোকিত ও মানবিক ঢাকা গড়ার পথে কিছুটা অগ্রসর হওয়া সম্ভব হবে।

গণপরিবহন: ঢাকার বিশৃঙ্খল গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একক ব্যবস্থাপনায় চার হাজার বাস নামানোর উদ্যোগ ছিল উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের। এর জন্য একাধিকবার পরিবহনমালিকসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে তিনি বৈঠক করেছিলেন। বলেছিলেন, কয়েক মাসের মধ্যেই এই সেবা চালু হবে। কিন্তু তিনি অসুস্থ হওয়ায় ওই উদ্যোগ থমকে যায়।

কারওয়ান বাজার স্থানান্তর: কারওয়ান বাজারের কাঁচাবাজারসহ তিনটি কিচেন মার্কেট স্থানান্তরের উদ্যোগও অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন আনিসুল হক। মহাখালী, আমিনবাজার ও যাত্রাবাড়ীতে তৈরি হয়ে থাকা তিনটি পাইকারি কাঁচাবাজারে কারওয়ান বাজারের দোকানগুলো স্থানান্তরের কথা ছিল।

মোহাম্মদপুর, মিরপুর, খিলগাঁওয়ের উন্নয়ন: গত ৮ মার্চ প্রকাশিত প্রথম আলোর সঙ্গে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আনিসুল হক বলেছিলেন, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, খিলগাঁওয়ের মতো এলাকার জন্য প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি হয়েছে। গুলশান, বনানী, বারিধারার উন্নয়নের রেপ্লিকা (প্রতিরূপ) আমরা সেখানে করব। এসব এলাকার জন্য ৬৫০ কোটি টাকার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে।

জলাবদ্ধতা: গত বর্ষায় উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর, খিলক্ষেত, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মিরপুর ১০, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আনিসুল হক বৃষ্টির পানি সরাতে ডিএনসিসি এলাকার খালগুলো খনন করার ঘোষণা দিয়েছিলেন।

খেলার মাঠ উন্মুক্ত করা: ডিএনসিসি এলাকায় অনেক মাঠ আছে। কিন্তু এসব সরকারের বিভিন্ন সংস্থার। এর মধ্যে কিছু মাঠ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের অধীনে আছে। বেশির ভাগ মাঠে সব শ্রেণির শিশু-কিশোরেরা খেলতে পারে না। মেয়র খেলার মাঠগুলো নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করতে চেয়েছিলেন।

রাস্তায় এলইডি বাতি: প্রথম আলোর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মেয়র আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘গত সাত-আট মাস ধরে সিটি করপোরেশনের প্রকৌশলীদের বিভিন্ন দেশে পাঠিয়েছি। অভিজ্ঞতা দরকার। টাকা সমস্যা নয়, সঠিক জিনিসটা দরকার। আমি ইউরোপীয় ব্র্যান্ডের এলইডি কেনার চেষ্টা করছি।’ দুর্নীতির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেছিলেন, অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি, তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে।

পরিবেশ ও পরিবেশ পুলিশ: নির্বাচনী ইশতেহারে আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘নগরায়ণ হবে পরিবেশবান্ধব। জল, জমি, বায়ু, শব্দদূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া হবে।’ বলেছিলেন, ‘করপোরেশনকে যদি ১০০ পুলিশ দেওয়া হয়, তাহলে এই শহরের অবস্থা বদলে যাবে। এখন সব কাজের জন্য পুলিশ চাইতে হয়। আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি, আমাকে ১০০ পরিবেশ পুলিশ দিন।’

কর্মজীবীদের জন্য: কর্মজীবী মায়েদের সুবিধার্থে পর্যায়ক্রমে ৩৬টি ওয়ার্ডে একটি করে আধুনিক ডে-কেয়ার সেন্টার কাম প্রি-স্কুল, প্রতিবন্ধী, শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা ও বয়স্ক নাগরিকদের জন্য ডিসকাউন্ট ও বিশেষ সেবাসংবলিত সিটি কার্ড প্রবর্তন, শিক্ষা ও চাকরি বা অন্য প্রয়োজনে রাজধানীতে ঠাঁই নেওয়া তরুণ-তরুণী-নারীদের জন্য সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে নিরাপদ ও আধুনিক কর্মজীবী হোস্টেল নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন আনিসুল হক।