'নাটোরের ফাদার ওয়াল্টার অপহৃত হননি'

ওয়াল্টার উইলিয়াম রোজারিও। ফাইল ছবি
ওয়াল্টার উইলিয়াম রোজারিও। ফাইল ছবি

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল সেন্ট লুইস উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ধর্মপল্লির পুরোহিত ওয়াল্টার উইলিয়াম রোজারিও অপহৃত হননি। এ দাবি করেছেন নাটোরের পুলিশ সুপার বিপ্লব বিজয় তালুকদার।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেন পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, ‘ফাদার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মগোপন করেছিলেন।’
এই সংবাদ সম্মেলনের কিছুক্ষণ আগে ওই পুরোহিতকে পুলিশ হেফাজতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। কাল রোববার তাঁকে আদালতে হাজির করা হবে।
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন,‘ফাদার ওয়াল্টার উইলিয়াম রোজারিও অপহৃত হয়েছিলেন না। পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর তাঁর বক্তব্য ও তথ্যপ্রযুক্তি পর্যালোচনা করে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ২৭ নভেম্বর বিকেলে তিনি বনপাড়া থেকে মোটরসাইকেলে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে টাঙ্গাইল গিয়ে হোটেলে রাত্রি যাপন করেন। বঙ্গবন্ধুর সেতুর টোল প্লাজার সিসি ক্যামেরায় তাঁকে টোল দিতে দেখা গেছে। পরের দিন তিনি মোটরসাইকেলে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে যান। সেখানে তাঁর মোটরসাইকেলটি রাস্তার পাশে ফেলে রেখে তিনি হোটেলে রাত্রি যাপন করেন। নবীগঞ্জ থানার পুলিশ মোটরসাইকেলটি পরিত্যক্ত অবস্থায় জব্দ করে। পরের দিন তিনি বাসে সিলেট শহরে যান। সেখানে হোটেলে অবস্থান করার পর তিনি শুক্রবার দুপুরের পরপরই দক্ষিণ সুরমা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে তাঁর বড় ভাইকে ফোন করেন। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যমতে সেখানকার পুলিশ ফাদারকে একটি বাসের কাউন্টার থেকে উদ্ধার করে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারের একটি দল তাঁকে সিলেট থেকে ঢাকায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। আজ নাটোর জেলা পুলিশ তাঁকে ঢাকা থেকে নাটোরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে নিশ্চিত হওয়া গেছে তিনি আদৌ অপহৃত হননি। স্বেচ্ছায় আত্মগোপন করেছিলেন। তবে তাঁর বক্তব্যগুলো যাচাইবাছাই করা হচ্ছে। তাঁকে রোববার আদালতে হাজির করা হবে। সেখানে তাঁর বিচারিক জবানবন্দি গ্রহণ করা হবে। এরপর আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কোন ঘটনায় পুরোহিত ওয়াল্টার মানসিক বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন? জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তা এ পর্যায়ে বলা যাচ্ছে না।’ কী কারণে পুরোহিত আবার নিজেকে আত্মপ্রকাশ করলেন, সে ব্যাপারে কোনো তথ্য পুলিশের কাছে আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি তাঁর উত্তর দেননি।
আত্মগোপন করে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বেকায়দায় ফেলানোর দায়ে ওই পুরোহিতের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সবকিছু করা হবে।’ নিখোঁজ থাকা অবস্থায় পুরোহিতের পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টি তাহলে কী ছিল? জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিখোঁজ হওয়ার খবর গণমাধ্যমে আসার পর এ ধরনের প্রবণতা দেখা যায়। এটা সম্পূর্ণ প্রতারণা।
সংবাদ সম্মেলনে এসপি ছাড়াও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ. হাসানুজ্জামান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আবদুল হাই, বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

গত সোমবার বিকেলে বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া শহর থেকে জোনাইল ধর্মপল্লির উদ্দেশে মোটরসাইকেল নিয়ে রওনা হওয়ার পর ফাদার ওয়াল্টার উইলিয়াম রোজারিও নিখোঁজ হন। পরের দিনদুপুরে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বড়াইগ্রাম থানায় এ ব্যাপারে সাধারণ ডায়েরি করা হলে পুলিশ তাঁকে উদ্ধারের জন্য জোর অভিযান শুরু করে। ওই দিন রাতে অজ্ঞাত একটি ফোন থেকে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে পরিবারে ফোন আসে। তবে মুক্তিপণ দেওয়ার আশ্বাস দিলেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে পুলিশ সিসি ক্যামেরায় পাওয়া ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করে সন্দেহভাজন পাঁচ তরুণকে খুঁজতে শুরু করে।