বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা চাষ

নীলফামারীর ডোমারের ভোগডাবুরী ইউনিয়নের কাঁঠালতলী গ্রামে মাল্টার চাষ করা হয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি ওই বাগান থেকে তোলা l প্রথম আলো
নীলফামারীর ডোমারের ভোগডাবুরী ইউনিয়নের কাঁঠালতলী গ্রামে মাল্টার চাষ করা হয়েছে। ছবিটি সম্প্রতি ওই বাগান থেকে তোলা l প্রথম আলো

নীলফামারীতে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয়েছে মাল্টা চাষ। ডোমার উপজেলার ভোগডাবুরী ইউনিয়নের কাঁঠালতলী গ্রামে ওই মাল্টার চাষ করছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা এস এম আবদুল্লাহ।

ওই গ্রামে প্রায় ৫০ বিঘা জমি নিয়ে ১৮ বছর আগে ‘পঞ্চনীল নার্সারি’ নামের নানা জাতের ফুল ও ফলের একটি বাগান করেন এস এম আবদুল্লাহ। আট বছর আগে এখানে তিনি মাল্টার চাষ শুরু করেন। বর্তমানে এখানে মাল্টা ছাড়া আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, কমলা, চালতা, আমড়া, হরীতকী, বয়রা সবই আছে। আছে নানা জাতের ফুলের নার্সারিও। এখন ওই বাগান দেখতে দূর-দূরান্তের অনেকে আসছেন ও মুগ্ধ হচ্ছেন পরিবেশবান্ধব এ বাগান দেখে।

সম্প্রতি ওই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে ঝুলছে মাল্টা, পেঁপে, চালতাসহ নানা জাতের ফল। এ সময় ওই মাল্টা বাজারজাত করতে গাছ থেকে সংগ্রহ করছিলেন বাগানে কর্মরত দুই ব্যক্তি। এ সময় তাঁদের সঙ্গে চলে নানা বিষয় নিয়ে কথা। তবে বাগানের ব্যবস্থাপক (নার্সারি) ওমর ফারুক বলেন, ‘পরিমাণে কম হলেও কিছুদিন ধরে আমরা মাল্টা বিক্রি করছি। এখন বাগানে ৫০টি গাছে মাল্টা ধরছে। তবে নতুন করে বাগানে আরও ৭০০ চারা রোপণ করা হয়েছে। এখানে বারি ১, পাকিস্তানি, ইন্ডিয়ান, মরক্কো ও ইরানি জাতের মাল্টা গাছ রয়েছে।’

বাগানের ভেতর সারি করে পলিথিনের ছোট ছোট ব্যাগে চারা গজিয়েছে। জানতে চাইলে ওমর ফারুক বলেন, ‘এগুলো জাম্বুরার চারা। ওই চারা তিন ফুট হলে সেটিতে মাল্টার কলম করা হবে। প্রায় দুই বছর ধরে এ পদ্ধতিতে গ্রাফটিং করে প্রায় ছয় হাজার চারা বিক্রি করা হয়েছে। এই চারা রোপণের দুই বছরের মধ্যে গাছে মাল্টা ধরা শুরু করে। এখান থেকে চারা সংগ্রহ করে এ অঞ্চলের অনেকে বাড়ি বাড়ি মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। এ ছাড়া পঞ্চগড়ের টোকরা ভাষা গ্রামের মাহফুজ রেজা এ বছর ১০০ চারা নিয়ে বাগান করেছেন।

ওই বাগানে সপরিবার ঘুরতে আসেন ব্র্যাকের নীলফামারী আঞ্চলিক সমন্বয়কারী হাবিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘লোকমুখে শুনে এখানে এসেছি। দেখে খুবই ভালো লাগছে।’

বাগানের সার্বিক দায়িত্বে থাকা রনজু মিয়া বলেন, আমাদের বাগানে মানবদেহে ক্ষতিকারক রাসায়নিক কীটনাশক বা সার ব্যবহার করি না। জৈবসার ও আমাদের নিজস্ব উদ্ভাবিত প্রযুক্তিতে পোকামাকড় দমন করি। শুকনা মরিচের গুঁড়া ও হুইল পাউডার মিশ্রণে কীটনাশক তৈরি করা হয়। এ বছর ১০০ টাকা কেজি দরে এখন পর্যন্ত ১০ মণ মাল্টা বিক্রি করেছি।’

এস এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘প্রায় ১৮ বছর আগে এখানে আমি নার্সারি ও বাগান করি। প্রায় আট বছর আগে আমি এখানে মাল্টার চারা রোপণ করি। মাটি ও আবহাওয়া মাল্টা চাষে উপযোগী হওয়ায় প্রায় পাঁচ বছর থেকে মাল্টা ফল দিচ্ছে। এখন ৫০টি গাছের মাল্টা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। রোপণের দুই বছরের মধ্যে গাছে মাল্টা ধরে। মাল্টার ফলন ভালো ও লাভজনক। তাই মাল্টার চারার চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। এ ছাড়া আমার বাগানের মাল্টার চাহিদা থাকায় দূর-দূরান্তের ফল বিক্রেতারা এসে বাগান থেকে মাল্টা সংগ্রহ করছেন। মাল্টা মৌসুমে একবার আসে কিন্তু চারা বিক্রি হয় সারা বছর।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহসীন রেজা বলেন, নীলফামারীর মাটি বেলে দোআঁশ ও আবহাওয়া শীতপ্রধান হওয়ায় মাল্টা চাষের জন্য এটি সম্ভাবনাময় জেলা। আগে মানুষ মনে করতেন, মাল্টা বিদেশি ফল। কিন্তু এখন মানুষের ধারণা পাল্টেয়েছে, তাই মাল্টা চাষে মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। আবদুল্লাহর বাগানটি মিশ্র ফলবাগান। ওই বাগান দেখে অনেকে ফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো. আবুল কাশেম আযাদ বলেন, এ বছর রাজস্ব খাতের প্রদর্শনী থেকে জেলায় ১০০ জন কৃষককে ১০০টি বাগান করতে বারি ১ জাতের ৬০টি করে মাল্টার চারা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা প্রত্যেকে ২০ শতাংশ করে জমিতে মাল্টার চাষ করছেন। সিলেট থেকে এ চারা সংগ্রহ করা হয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে তাঁরা বাণিজ্যিকভাবে মাল্টা সংগ্রহ করতে শুরু করবেন।