তিন নবজাতককে নিয়ে বিপাকে দম্পতি

ফরিদপুরের গোয়ালচামটে বেসরকারি হাসপাতালের ইনকিউবেটরে চিকিৎসাধীন তিন নবজাতক l প্রথম আলো
ফরিদপুরের গোয়ালচামটে বেসরকারি হাসপাতালের ইনকিউবেটরে চিকিৎসাধীন তিন নবজাতক l প্রথম আলো

ফরিদপুরে অপরিণত অবস্থায় বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে জন্ম নেওয়া তিন নবজাতককে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র এক দম্পতি। নবজাতকদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ করার ক্ষমতা নেই দরিদ্র ওই পরিবারটির।

কাকলী বেগম (৩০) নামের এক গৃহবধূ অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ৭ মাস ১৫ দিনের মাথায় ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামট মহল্লার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একসঙ্গে তিনটি মেয়ে নবজাতকের জন্ম দিয়েছেন। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে তাদের জন্ম হয়। কাকলী ফরিদপুর সদর উপজেলার আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বিলমামুদপুর গ্রামের মজিবুর রহমানের (৪২) স্ত্রী। মজিবুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে এমএলএসএস পদে অস্থায়ী নিয়োগে চাকরি করেন।

তিন নবজাতককে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন ওই দম্পতি। তাদের উন্নত চিকিৎসা ও লালন-পালনের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁরা। সন্তান জন্ম নেওয়ার আনন্দ এখন তাঁদের কাছে বিষাদে পরিণত হয়েছে। এই দম্পতির কাঞ্চন নামের নয় বছরের একটি ছেলে রয়েছে। কাঞ্চন স্থানীয় বায়তুল আমান কিন্ডারগার্টেনের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিশ্বনাথ রায় বলেন, গর্ভধারণের ৭ মাস ১৫ দিনের মাথায় গত বুধবার রাতে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই তিন নবজাতকের জন্ম হয়। সন্তান জন্ম দেওয়ার পরপর মায়ের শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকলেও এখন তিনি সংকট কাটিয়ে উঠেছেন। তবে আগেভাগে জন্ম নেওয়ায় তিন নবজাতকেরই শারীরিক অবস্থা ভালো না।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তিন নবজাতককে এখন ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে। নিবিড় পরিচর্যার পাশাপাশি অক্সিজেন ও অ্যান্টিবায়োটিক স্যালাইন দিতে হচ্ছে।

নবজাতকদের সেবায় নিয়োজিত শিশু বিশেষজ্ঞ বিজয় কুমার সাহা বলেন, তিনটি নবজাতক অপরিণত অবস্থায় রয়েছে। তাদের অবস্থা নাজুক। কেননা তাদের শারীরিক গঠন, ওজন ও পরিপক্বতা পেতে আরও বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। এ সময় সবচেয়ে বড় প্রয়োজন উন্নত চিকিৎসাসেবা দেওয়া। নবজাতকদের ঢাকায় নিয়ে আইসিইউতে রেখে উন্নত চিকিৎসা দিতে পারলে ভালো হয়।

সন্তানদের বাবা মজিবুর রহমান বলেন, তিন সন্তানকে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দিতে হলে এই মুহূর্তে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা প্রয়োজন। কিন্তু এত টাকা ব্যয় করার ক্ষমতা তাঁর নেই। তিনি সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অফিস শাখায় এমএলএসএস পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করেন। সামান্য বেতনে তাঁর সংসার চালানোই দায়। এই অবস্থায় সন্তান তিনটির চিকিৎসা আর খাওয়ার দুধসহ অন্যান্য খরচ বহন করা তাঁর পক্ষে কষ্টকর। এ জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চান তিনি।

কাকলী বেগমের ভাই নাসির উদ্দিন বলেন, সন্তান গর্ভে আসার পর থেকেই চিকিৎসা বাবদ অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে পরিবারটির। টাকার অভাবে এই মুহূর্তে ঢাকায় নিয়ে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই তিনটি নবজাতকের ভাগ্য আজ অনিশ্চিত।