পয়লা বৈশাখে বগুড়ায় গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা ছিল

পয়লা বৈশাখ সামনে রেখে গত বছর জঙ্গি হামলার জন্য বগুড়ার শেরপুর উপজেলার জোয়ানপুর গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনা করেছিল নব্য জেএমবি। গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছিল নব্য জেএমবির অন্যতম নেতা চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছোট মিজানের কাছ থেকে। সরঞ্জাম সংগ্রহের আগে আস্তানায় গ্রেনেড তৈরির জন্য জেএমবির বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক শাখার প্রধান ও বোমা বিশেষজ্ঞ ফারদিন ছিলেন গ্রেনেড তৈরির প্রশিক্ষক। আর গ্রেনেড তৈরির জন্য সবজি ব্যবসায়ী এবং পরে অটোরিকশার চালক পরিচয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিলেন জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা দেলোয়ার হোসেন ওরফে মিস্ত্রি মিজানুর রহমান। গত বছরের ৩ এপ্রিল গ্রেনেড তৈরির সময় বিস্ফোরণে বোমা তৈরির কারিগর ফারদিন ও তরিকুল ইসলাম ওরফে জুয়েল নিহত হন। এরপর জোয়ানপুর গ্রামের জঙ্গি আস্তানা থেকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে আত্মগোপন করেন মিজানুর। পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানান মিজানুর। গত বৃহস্পতিবার বগুড়ার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আবু রায়হানের আদালতে তিনি এই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

একই আদালত নব্য জেএমবির উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলার সামরিক শাখার প্রধান মো. বাবুল আকতার ওরফে বাবুল মাস্টার, জেএমবির সক্রিয় সদস্য আলমগীর ওরফে আরিফ ও আফজাল হোসেন ওরফে লিমনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। জেএমবির ওই চার সদস্যকে বিদেশি পিস্তল, গুলিসহ গত বুধবার রাতে বগুড়ার মোকামতলা বন্দরের জয়পুরহাট-মোকামতলা মোড় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আদালতে স্বীকারোক্তির আগে মিজানুর রহমান নিজেকে জেএমবির শুরা সদস্য পরিচয় দেন। গত বছর রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় আহম্মদিয়া মসজিদে আত্মঘাতী হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী ছিলেন তিনি।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে মিজানুর রহমান বলেন, ২০০৫ সালে চাচাতো ভাই রমজান আলীর মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করেন। শুরুতে প্রতি মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা সংগঠনে চাঁদা দিতেন। ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার পর রমজানের সঙ্গে তিনিও আত্মগোপন করেন। ২০১২ সালে রমজানের মাধ্যমে ফের জেএমবিতে সক্রিয় হন। ২০১৪ সালে নতুন জঙ্গি সংগঠন জুনুদ আত তাওহীদ আল খিলাফাহতে কিছুদিন কাজ করেন। পরে যোগ দেন নব্য জেএমবিতে। ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর রাজশাহীর বাঘমারায় আহম্মদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করেন। হামলায় তাঁর ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন ওরফে নাঈমও অংশ নেন।

পরে সাংগঠকি কার্যক্রম জোরদার করতে ২০১৪ সালে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় আস্তানা গাড়েন। ২০১৫-এর শেষ দিকে গাড়িদহ ইউনিয়নের জোয়ানপুর কুঠিরভিটা গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে উত্তরবঙ্গের নব্য জেএমবির সর্ববৃহৎ আস্তানা গড়ে তোলেন।

আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিতে মিজানুর আরও উল্লেখ করেন, তিনি অটোরিকশাচালকের ছদ্মবেশে জোয়ানপুর গ্রামে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সেখানে যাতায়াত ছিল জেএমবির প্রথম সারির অনেক নেতার। বাসায় জেএমবির বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞদের গ্রেনেড তৈরির প্রশিক্ষণ দেন ফারদিন। পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার ধাপের হাট থেকে গ্রেনেড তৈরির সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়।

মিজানুরের জবানবন্দীর সত্যতা নিশ্চিত করে বগুড়ার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বাকি তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এখনো মুখ খোলেননি কেউ।