গ্রামবাসীর টাকায় সড়ক সংস্কার

গুরুদাসপুর উপজেলার মহারাজপুরে গ্রামবাসীর চাঁদার টাকায় কেনা ইট-সুরকি সড়কে ফেলে কাজ করেন এলাকাবাসী। গত রোববার মুক্তবাজার এলাকায় l প্রথম আলো
গুরুদাসপুর উপজেলার মহারাজপুরে গ্রামবাসীর চাঁদার টাকায় কেনা ইট-সুরকি সড়কে ফেলে কাজ করেন এলাকাবাসী। গত রোববার মুক্তবাজার এলাকায় l প্রথম আলো

‘রাজা-মহারাজা’দের গ্রাম। কিন্তু জলাবদ্ধতার কারণে তাদের চলাচলের সড়কটি ছয় মাস ডুবে থাকে কাদা-পানিতে। হেঁটে চলাও কঠিন। এমন অবস্থা আর কত দিন সহ্য করা যায়? তাই চাঁদা তুলে সেই সড়কে ইট-সুরকি ফেলে চলাচলের উপযোগী করেছে গ্রামের মানুষ।

সড়কটি নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাপিলা ইউনিয়নের মহারাজপুর গ্রামের। এটি প্রাচীন সমৃদ্ধিশালী গ্রাম।

মহারাজপুর গ্রামের বাসিন্দা ও কলেজশিক্ষক মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, গ্রামের আহাদ আলীর মোড় থেকে পশ্চিমে আব্বাস মোড়, আহাদের বাড়ি থেকে মুক্তবাজার হয়ে মতি ডাক্তারের বাড়ি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার সড়ক পাকা হয় এক দশক আগে। দুই বছরের মাথায় সড়কটি খানাখন্দে পরিণত হয়। প্রায় ছয় বছর ধরে সড়কটি চলাচলের একেবারে অনুপযোগী। ২০১৫ সাল থেকে বর্ষার ছয় মাস সড়কটি পানি-কাদায় ডুবে থাকে। এখন তারা এ সড়কে ইট-সুরকি ফেলেছে। কিন্তু বুলডোজারের অভাবে পথ এবড়োখেবড়ো হয়ে রয়েছে। তা সমতল করা দরকার।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, মহারাজপুর গ্রামসহ চাপিলা ইউনিয়নে প্রায় সাড়ে ৮০০ পুকুর রয়েছে। এসব পুকুর তৈরি হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। এ কারণে বৃষ্টি হলে পানিনিষ্কাশনের উপায় নেই। তৈরি হয় জলাবদ্ধতার। তখন পানিতে ডুবে যায় সড়ক। এ নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেও কাজ হয়নি। পরে সমস্যা সমাধানে এককাট্টা হয়ে ওঠে গ্রামের মানুষ। গত অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে সড়ক সংস্কারে আট সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।

ওই কমিটিতে অবসরপ্রাপ্ত সার্জন মোসাদ্দেক আলীকে সভাপতি ও আনোয়ার হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। অন্য সদস্যরা হলেন মজিবুর রহমান, এসহাক আলী, আবদুল আলীম, আবদুল খালেক, নাছিরুজ্জামান ও আবুল কালাম আজাদ।

কমিটির সভাপতি মোসাদ্দেক আলী বলেন, কমিটি গঠনের পর গ্রামের প্রায় সব মানুষকে নিয়ে দুই দফা বৈঠক করা হয়। সেখানে সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে একমত হন সবাই। পরে ১ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত স্বেচ্ছায় অনুদান দেয় গ্রামের মানুষ। এভাবে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা ওঠে।

কমিটির সদস্য মজিবুর রহমান বলেন, গ্রামবাসীর চাঁদার টাকায় প্রায় ২০০ গাড়ি ইট-সুরকি ও বালু কেনা হয়। গত ১ নভেম্বর থেকে গ্রামের মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে এসব উপকরণ সড়কে ফেলতে শুরু করে। তারা স্থানীয় পদ্ধতিতে গুঁড়িয়ে তা সড়ক সংকারের কাজে সহযোগিতা করে। পাশাপাশি সাময়িকভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনে পুকুরের পাড় দিয়ে পাইপ বসিয়ে তিন কিলোমিটার দূরের নালায় পানি ফেলা হয়।

গত মঙ্গলবার গিয়ে দেখা যায়, ইট-সুরকির সঙ্গে বালু মিশিয়ে সড়কে ফেলা হয়েছে। বুলডোজার দিয়ে সমান না করায় সড়ক ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় রয়েছে। এ বিষয়ে ইউএনও মোহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে একটি কমিটি ও একটি উপকমিটি করা হয়েছে। পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়াসহ পাকা সড়ক নির্মাণ করা হবে।