বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবেন চন্দন?

চন্দন রায়
চন্দন রায়

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ২৭তম স্থান অধিকার করেছেন রিকশাচালক বাবার সন্তান চন্দন রায়। অর্থের অভাবে এখন তাঁর ভর্তি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

চন্দন রায়ের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের শেরমস্ত নদীরপাড় গ্রামে। দুই ভাইবোনের মধ্যে তিনি বড়। চন্দন রায়ের বাবা রূপানন্দ রায়ের উপার্জনের একমাত্র সম্বল রিকশাটি এতটা পুরোনো ও ভাঙাচোরা যে অপরিচিত কেউ যানটিতে উঠতে চায় না। পরিচিত ব্যক্তিরা অনেকটা দয়াবশত ওঠেন। এই রিকশার মতোই চলছে চন্দনের সংসার। মাঝেমধ্যে তাঁর মা দয়া রানী অন্যের খেতখামারের কাজ করেন। চন্দন টিউশনি ও ইটভাটায় কাজ করে সংসারে সহায়তা করে লেখাপড়া এত দূর পর্যন্ত লেখাপড়া চালিয়ে এসেছেন। এখন থমকে গেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ চালানোর মতো সামর্থ্য তাঁর নেই।

আজ মঙ্গলবার চন্দনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দুই শতক জমির ওপর বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা একটি টিনের ঘরে পরিবারটির বাস। ভেতরের আসবাব বলতে দুটি চৌকি আর ভাঙা একটি টেবিল। চন্দনের বাবা রূপানন্দ রায় পেটের ব্যথায় বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছেন। বাড়িতে আর কেউ নেই। জানা গেল, চন্দন তখন বাড়ি পাশের একটি ইটভাটায় কাজে গিয়েছেন। আর তাঁর মা অন্যের খেতে ধান কাটার কাজ করতে গেছেন।

পরে চন্দনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘স্কুল বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে। হেঁটে ক্লাস করতাম। টিফিনের সময় না খেয়ে থাকতাম। এভাবেই পড়াশোনা চালিয়ে এসেছি।’

চন্দন এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পান। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ২৭তম হয়েছেন। চন্দন বলেন, ‘আমার জন্য বাবা-মা অনেক কষ্ট করেছেন। পড়ার খরচ জোগাতে আমি টিউশনি ও ইটভাটায় কাজ করেছি। এখন গণিত বিষয়ে পড়াশোনা করতে চাই। পড়াশোনা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে চাই। কিন্তু অভাবের সংসারে সেটা সম্ভব হবে কি না জানি না।’

চন্দনের বাবা বলেন, ‘দাদা, ছেলেটার মোর খুব কষ্ট, খেয়া না খেয়া থাকে, তা-ও খালি বই পড়ে, এ্যালা শুনুছং ছেলেটা মোর বিশ্ববিদ্যালয়ত টিকছে। কিন্তুক মোর তো হইল জঞ্জাল। ওইটে ভর্তি করার টাকা পাইম কোনটে।’ কথাগুলো বলতে বলতে হতদরিদ্র রূপানন্দ রায়ে চোখ ছল ছল করে ওঠে।

আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদের বলেন, চন্দনের পরিবার খুবই দরিদ্র। চন্দন অত্যন্ত মেধাবী ও পরিশ্রমী। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা পেলে সে ভালো করবে।