শিক্ষকেরাও জুতা পায়ে শহীদ মিনারে

কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে জুতা–স্যান্ডেল পরা স্কুল কমিটির সদস্য ও শিক্ষকেরা l ছবি: সংগৃহীত
কুষ্টিয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে ফুল দিতে গিয়ে জুতা–স্যান্ডেল পরা স্কুল কমিটির সদস্য ও শিক্ষকেরা l ছবি: সংগৃহীত

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ গত শনিবার কুষ্টিয়ার দুটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে একাত্তরে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কিন্তু এ সময় অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী বেদিতে ওঠে। ফুল দেওয়ার পর শিক্ষার্থীরা জুতা পায়ে সেখানে মুঠোফোনে ছবি তোলে। এভাবে শহীদ মিনারের পবিত্রতা নষ্ট করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেক শিক্ষার্থী এসব ছবি পোস্ট দেয়। কয়েকটি ছবি ভাইরাল হয়েছে।

সদর উপজেলা হাটশহরিপুর গ্রামে হাসান ফয়েজ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও দি ওল্ড কুষ্টিয়া হাইস্কুলে এ ঘটনা ঘটেছে। জুতা পায়ে শহীদ মিনারের বেদিতে দাঁড়িয়ে তোলা সেলফি শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে পোস্ট দেয়। এমন ছবিতে ওই সব বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সদস্যসহ শিক্ষকদেরও দেখা গেছে।

জানতে চাইলে জেলা ডেপুটি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রফিকুল আলম বলেন, ‘এটি দেশ ও জাতির জন্য একটি লজ্জার ব্যাপার। শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষার বিষয়ে শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা নেবে। এখন শিক্ষকেরাই যদি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে না পারেন, তাহলে তাঁদের কাছ থেকে কোমলমতি ছেলেমেয়েরা কী শিক্ষা পাবে? এ ধরনের ঘটনা শহীদদের প্রতি অশ্রদ্ধার শামিল।’

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার সকালে দি ওল্ড কুষ্টিয়া হাইস্কুল ও শহীদ হাসান ফয়েজ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের চত্বরে পৃথক অনুষ্ঠান হয়। সকালে প্রতিষ্ঠান দুটির পরিচালনা কমিটির সদস্য ও শিক্ষকেরা শহীদ মিনারে ফুল দেন। এ সময় শিক্ষক ও কমিটির সদস্যদের সবার পায়ে জুতা ও স্যান্ডেল পরা ছিল। তাঁরা বেদিতে দাঁড়িয়ে ছবিও তোলেন। জুতা পায়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন দি ওল্ড কুষ্টিয়া হাইস্কুলের অ্যাডহক কমিটির সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম ও বর্তমান সভাপতি মোস্তাক হোসেন। তাঁদের সঙ্গে কমিটির অন্য সদস্য ও শিক্ষকেরা ছিলেন। একই চিত্র দেখা গেছে শহীদ হাসান ফয়েজ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির সভাপতি হাসান যোহান রব্বানী, বিদ্যোৎসাহী সদস্য মাহাবুব আলম ও প্রধান শিক্ষক জহুরুল ইসলামকেও জুতা পায়ে শহীদ বেদিতে ছবি তুলতে দেখা যায়।

জানতে চাইলে শহীদ হাসান ফয়েজ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের বিদ্যোৎসাহী সদস্য মাহাবুব আলম বলেন, ‘ভুল হয়ে গেছে। সে সময় আমাকে কেউ জুতা খুলতে বলেনি। নিউজ কইরেন না।’

দি ওল্ড কুষ্টিয়া হাইস্কুলের অ্যাডহক কমিটির সাবেক সভাপতি আবুল কাশেম বলেন, ‘আমি অসুস্থ, তাই পাদুকা খুলতে পারিনি। বিষয়টি বুঝতে পারিনি।’

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, এ ধরনের কোনো অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।