সেতু ও নদী শাসনের কাজ যেভাবে হচ্ছে

পদ্মা সেতুর নদীর অংশ ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এই অংশগুলোকে ৪০টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রতি ভাগের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার। ৪১টি পিলারকে ৪০টি স্প্যান দিয়ে জোড়া দিয়েই পদ্মা সেতু। 

স্প্যানগুলো হচ্ছে ভারী স্টিলের কাঠামো, যা দ্বিতলবিশিষ্ট। এর ভেতর দিয়ে যাবে ট্রেন। আর ওপরে কংক্রিটের স্ল্যাব জোড়া দিয়ে করা হবে যানবাহন চলাচলের পথ। গত সেপ্টেম্বর মাসে জাজিরা প্রান্তে দুটি পিলারের মধ্যে একটি স্প্যান বসানো হয়েছে।
এই নদীর অংশের বাইরে দুই পাড়ে ডাঙাতেও সেতুর অংশ থাকবে। এটাকে বলা হয় ভায়াডাক্ট। এর দৈর্ঘ্যও প্রায় ৪ কিলোমিটার। এটাতে আর স্টিলের স্প্যান বসবে না। এই অংশে যানবাহন চলার পথ হবে সাধারণ উড়ালসড়কের মতো। আর রেলের অংশ হবে সাধারণ রেলসেতুর মতো।
সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, দুই পাড়ে দুটি বিশেষ পিলার বসানো হবে, যা ট্রানজিশনাল পিয়ার নামে পরিচিত। এই দুটি পিলারের পর আর স্প্যান বসবে না। দুই পিলার থেকে যানবাহন চলাচলের পথ দুই ভাগ হয়ে যাবে। একটি দিয়ে সেতুতে ওঠার, অন্যটি দিয়ে নামার পথ থাকবে। আর মাঝখানে থাকবে ট্রেন চলার পথ।
নকশা অনুসারে বিশেষ দুই পিলারের পর ভায়াডাক্ট অংশে পিলার হবে ঘন ঘন। দুই পাড়ে ৪ কিলোমিটার পথে ৭৭টি পিলার নির্মাণ করতে হবে। এর ওপর উড়ালসড়কের মতো বড় স্ল্যাব বসাতে হবে।
নদী ও ডাঙার অংশ মিলিয়ে প্রায় ৯ কিলোমিটার অংশকে বলা হচ্ছে মূল সেতু। মূল সেতুতে পিলার হবে ১১৮টি। এর মধ্যে নদীতে হবে ৪২টি, ডাঙায় ৭৬টি। এখন পর্যন্ত নদীর অংশে পিলারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৪টির, ১২টির কাজ চলছে। ডাঙার অংশে ৫টি পিলার উঠেছে, ৮টির কাজ চলছে। পিলারের নিচে পাইল বসবে ৬০৫টি। এর মধ্যে নদীর অংশের ২৪০টি পাইলের প্রতিটি ৩ মিটার ব্যাসার্ধের স্টিলের পাইপের মতো। রডের তৈরি বাকি ৩৬৫টি পাইল ডাঙার অংশের, যা ৯৮ থেকে ১২৮ মিটার গভীরে পৌঁছাতে হবে। এখন পর্যন্ত নদীতে ৭৮টি পাইল পুরো বসানো হয়েছে, ১৬টি আংশিক বসেছে। আর ডাঙায় ১৫টি পাইল বসানো বাকি আছে।
মূল সেতুর এই পুরো কাজ পেয়েছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। তাদের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৪ সালের ১৮ জুন। চুক্তিমূল্য ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা। ৪৮ মাসে, অর্থাৎ আগামী বছরের নভেম্বরে কাজ শেষ করার কথা। গত অক্টোবর পর্যন্ত ৬ হাজার ২৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
দুই পাড়ে নদী শাসন হওয়ার কথা ১২ কিলোমিটার। এটির কাজও বহুমাত্রিক। নদীর তলদেশ খনন, ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলা ও পাড় বাঁধাইয়ের কাজ রয়েছে। এই কাজে ১ কোটি ৩৩ লাখ কংক্রিটের ব্লক ও ২ কোটির বেশি বালুভর্তি জিও ব্যাগ দরকার। নদী খননের ফলে ২১২ কোটি ঘনফুট বালু স্থানান্তর করতে হবে। এই কাজও পেয়েছে চীনেরই আরেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো করপোরেশন। তাদের সঙ্গে চুক্তি হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। চুক্তিমূল্য ৮ হাজার ৭০৮ কোটি টাকা। ৪৮ মাস, অর্থাৎ আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা। এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৩ হাজার ১৫ কোটি টাকা।