বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন

শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেও প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের বিরোধ মেটানো গেল না। আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দুটি দলকেই নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সামলাতে হবে। এ অবস্থায় চিন্তিত দলীয় সমর্থন পাওয়া প্রার্থীরা।
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। এদিন অধিকাংশ জায়গাতেই চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের খবর পাওয়া গেছে। এর পরও ২১ জেলার ৪০টি উপজেলায় দুই দলের এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী ওই পদে নির্বাচনে রয়ে গেছেন। প্রথম আলোর অনুসন্ধান অনুযায়ী, এসব উপজেলায় বিএনপির চেয়ে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা তুলনায় সামান্য বেশি। ৪০টি উপজেলায় বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী যেখানে ৩৬ জন, সেখানে আওয়ামী লীগের ৩৮ জন। প্রথম ধাপে ৯৮টি উপজেলার মধ্যে ৯৭টিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি এবং একটি উপজেলায় ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রার্থিতা প্রত্যাহার শেষে উপজেলা নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক হাজার ২৭৪ জন। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৪৩২, ভাইস চেয়ারম্যান ৫১৩ ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩২৯ জন। কোনো প্রার্থী না থাকায় বগুড়ার দুপচাঁচিয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরায় দুজন নারী ভাইস চেয়ারম্যান এবং সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে একজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
পঞ্চগড়ের চার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে বড় দুই দলের চারজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন সাতজন বিদ্রোহী প্রার্থী। সদর ও দেবীগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একজন করে এবং বোদায় বিএনপির দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। আটোয়ারীতে অংশ নিচ্ছেন দুই দলের একক প্রার্থী।
রাজবাড়ীর তিন উপজেলায় ছয়জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। এর পরও বালিয়াকান্দিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একজন করে দুজন এবং পাংশায় আওয়ামী লীগের দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
খুলনার কয়রা ও দিঘলিয়ায় দুই দলের পাঁচজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তবে দিঘলিয়ায় এখনো আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। যশোরের অভয়নগরে আওয়ামী লীগের একজন এবং সাতক্ষীরার আশাশুনিতেও একজন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
বরিশালের গৌরনদী ও বাকেরগঞ্জে বিএনপির দুজন করে চারজন এবং বাকেরগঞ্জে আওয়ামী লীগের একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। ভোলার লালমোহনে ছয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেও আওয়ামী লীগের চারজন ও বিএনপির দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী লড়াই করছেন।
বগুড়ার ছয় উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ২১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। দুপচাঁচিয়া ও সোনাতলায় দুই দলের বিদ্রোহী না থাকলেও ধুনটে আওয়ামী লীগের একজন ও বিএনপির দুজন, সারিয়াকান্দিতে আওয়ামী লীগের দুজন, নন্দীগ্রামে বিএনপির চারজন ও শেরপুরে বিএনপির একজন বিদ্রোহী প্রার্থী লড়াই করছেন।
জামালপুর সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুজন করে চারজন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পাবনার সাঁথিয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুজন করে চারজন এবং সুজানগরে বিএনপির দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, জাজিরা, ডামুড্যা ও গোসাইরহাটে বিএনপির কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। তবে প্রতিটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের একজন করে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। মাদারীপুরের কালকিনিতে বিএনপির প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মধ্যেই লড়াই হবে। ক্ষমতাসীনদের মোট তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর, সাটুরিয়া ও শিবালয়ে দুই দলের একজন করে প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। শুধু সিঙ্গাইরে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। নরসিংদীর পলাশ ও বেলাব উপজেলায় কারোরই একক প্রার্থী নেই। পলাশে একজন ও বেলাবতে তিনজন করে আওয়ামী লীগের মোট চারজন এবং বেলাবতে বিএনপির একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, নিকলী ও বাজিতপুরে দুই দলের ছয়জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। নিকলী ও বাজিতপুরে আওয়ামী লীগের কোনো বিদ্রোহী না থাকলেও করিমগঞ্জে বিএনপির একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় চেয়ারম্যান পদে একজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একজন করে প্রার্থীই রয়েছেন।
সিলেটের ছয় উপজেলায় মোট ২৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। বিশ্বনাথ ও গোয়াইনঘাটে প্রধান দুই দলের প্রার্থীরা এককভাবে লড়াই করছেন। তবে কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একজন করে, জকিগঞ্জে বিএনপির দুজন, আওয়ামী লীগের একজন এবং গোলাপগঞ্জে বিএনপির দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। সিরাজগঞ্জের চার উপজেলায় ১১ জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। সদর, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়ায় দুই দলের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকলেও কাজীপুরে আওয়ামী লীগের দুজন বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে দুই দলের পাঁচজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। সেখানে আওয়ামী লীগের দুজন ও বিএনপির একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। মিরসরাইয়ে বিএনপির বিদ্রোহী তিনজনই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলেও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন।
খাগড়াছড়ি সদর, মাটিরাঙ্গা ও পানছড়িতে দুই দলেরই একক প্রার্থী লড়াই করছেন। তবে রামগড়ে বিএনপির দুজন এবং মানিকছড়িতে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। মহালছড়িতে বিএনপির কোনো প্রার্থীই নেই। সেখানে আওয়ামী লীগেরও কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তবে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী রয়ে গেছেন। হবিগঞ্জের বাহুবল ও মাধবপুর থেকে কেউ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ফলে বাহুবলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে তাঁর নিজ দলেরই দুজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়তে হবে।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন আমাদের সংশ্লিষ্ট এলাকার নিজস্ব প্রতিবেদক, আঞ্চলিক কার্যালয় ও প্রতিনিধিরা।]