ইয়াবা ব্যবসা ঠেকাবেন বদি!

আবদুর রহমান বদি
আবদুর রহমান বদি

সবাই জানেন, ইয়াবা আসছে টেকনাফ থেকে। তাহলে সেটা কেন বন্ধ করা যাচ্ছে না? এলাকার সাংসদই বা কী বলেন। দিনাজপুর-২ আসনের সাংসদ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর এই প্রশ্নের জবাবে টেকনাফের সাংসদ (কক্সবাজার-৪) আবদুর রহমান বদি বলেন, ‘আমি নিজেও জানি না রিকশাচালক কী করে গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়ে যাচ্ছে। আসলে ইয়াবা ব্যবসা করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ নেতারা।’

গতকাল রোববার রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি সদর দপ্তরে আয়োজিত সীমান্ত সমস্যা ও সমাধান সম্পর্কিত মতবিনিময় সভায় ইয়াবাসহ অনেক বিষয়ই উঠে আসে।

সাংসদ আবদুর রহমান বদির বিরুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের পৃষ্ঠপোষকতা করার অভিযোগ অনেক পুরোনো। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি সভায় বলেছেন এখন যেসব ইয়াবা চালান আটক করা হচ্ছে, তাতে কোনো পাচারকারী ধরা পড়ছে না। মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে বড় বড় ইয়াবার চালান যাচ্ছে। ইয়াবার চালান বন্ধে সহায়তার কথা বলেন বদি।

মতবিনিময় সভায় বেশির ভাগ সাংসদ বলেন, সীমান্ত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। এই সমন্বয়হীনতার কারণে মাদক পাচার ও চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। আবার সাংসদেরা এতে কোনো ভূমিকাও রাখতে পারছেন না। সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) চোরাচালান বন্ধের নামে সীমান্ত এলাকায় নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছে, গ্রেপ্তারের নামে বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। সন্ধ্যার পর জোর করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছে।

বিজিবি সদর দপ্তরের শহীদ ক্যাপ্টেন আশরাফ হলে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় সীমান্ত এলাকার ৩৩ জন সাংসদ উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ ১০-১২ জন সাংসদ তাঁদের অভিমত তুলে ধরেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে আয়োজিত এই সভায় মন্ত্রণালয়ের দুই সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন ও ফরিদ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক, র‍্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়াল অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. জামাল উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত ছিলেন। শুরুতে বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন। সভা সাংবাদিকদের জন্য উন্মুক্ত ছিল না।

সভায় ঝিনাইদহ এলাকায় বিজিবি সাধারণ মানুষকে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ করেন ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাংসদ নবী নেওয়াজ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সীমান্তের ওপারে বিএসএফের হাতে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার পর বিজিবি লোকজনের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে, তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। বিজিবির ভয়ে দুই হাজারের বেশি লোক এলাকাছাড়া হয়েছে। ভারতীয় বলে মানুষের গোয়াল থেকে গরু নিয়ে যাচ্ছে বিজিবি। তারা সন্ধ্যার পর এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ করে দিচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের সাংসদ গোলাম রব্বানী সভায় বলেন, সীমান্তের ওপর থেকে আসা গরু বিট বা খাটালে রাখা হয়। সেই খাটালের অনুমোদন দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কারা খাটালের অনুমোদন পায় তা সাংসদেরা জানেন না। তিনি বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে সীমান্তে অস্ত্র চোরাচালান হচ্ছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাংসদ আবদুল ওদুদ বলেন, পুলিশ ও বিজিবির কাজের কোনো সমন্বয় নেই।

কুষ্টিয়া-১ আসনের সাংসদ রেজাউল হক চৌধুরী বলেন, মাদক পাচারের অভিযোগে একজনকে ধরা হলেও দেখা যায় তার আশপাশের আরও ১০ জনকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা হচ্ছে।

সীমান্ত অতিক্রম করে বন্য হাতি এসে ফসল নষ্ট করে দিচ্ছে বলে জানান শেরপুর-৩ আসনের সাংসদ এ কে এম ফজলুল হক। তিনি বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের আলোচনা করা উচিত। তাঁর বক্তব্য সমর্থন করেন জামালপুর-১ আসনের সাংসদ আবুল কালাম আজাদ। এরপর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানতে চান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাতি ঠেকাবে কী করে?

বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, সীমান্ত সংরক্ষিত রাখতে কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। বিজিবিকে আরও ১৫ হাজার জনবল নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সীমান্তে চেকপোস্ট বাড়ানো হচ্ছে এবং রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে। এ ছাড়া পুলিশও যাতে সীমান্তে নজর রাখে, সে জন্য সাংসদেরা প্রস্তাব দিয়েছেন।

বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয়ের ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কিছু এলাকায় সমন্বয়ের অভাব আছে। সব বাহিনীর মধ্যে যাতে সমন্বয় থাকে সে জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। চোরাচালান বন্ধে সমন্বয় থাকা উচিত বলে পরামর্শ দিয়েছেন সাংসদেরা।’

সভায় সাংসদদের প্রস্তাবের বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, মাদক এ দেশে তৈরি হয় না, ভারত ও মিয়ানমার থেকে আসে। টেকনাফ দিয়ে ইয়াবাসহ যে বিভিন্ন মাদক আসে তা বন্ধ করতে পরামর্শ দিয়েছেন সাংসদেরা। সীমান্তে হত্যা কমে এসেছে বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হত্যার সংখ্যা ক্রমেই কমে আসছে। ২০০৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ৬৮, এখন ২০১৭ সালে এসে তা ২১ জনে নেমে এসেছে।

মাদক চোরাচালানে সাংসদ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনেক সদস্য জড়িত এমন অভিযোগের বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, জনপ্রতিনিধি বা বাহিনীর সদস্য যেই হোক না কেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কারও সম্পৃক্ততা পেলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।